যারা এসএসসি/ দাখিল/ ভোকেশনাল/ সমমানের পরীক্ষা দিয়েছেন। তারা পাশ করার
পর কোন না কোন কলেজ/ মাদ্রাসা/ পলিটেকনিকে ভর্তি হবেন। যদি আপনি পলিটেকনিকে
অর্থাৎ
ডিপ্লোমা –ইন–ইঞ্জিনিয়ারিং ,মেরিন, টেক্সটাইল , গ্লাস এন্ড সিরামিক্স এ পড়াশুনা করতে চান তাহলে আপনার জন্য এইটি পোস্টটি ।
এস.এস.সি পরীক্ষার পর প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পদ্ধতির কারণে শিক্ষাগ্রহণ
অনেকটাই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই এই প্রতিযোগিতায়
টিকতে না পেরে পড়াশোনায় এক ধরনের হতাশায় থাকেন । তবে চাইলে এস.এস.সি
পরীক্ষার পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে যে কোনো ডিপ্লোমা কোর্সেও ভর্তি
হয়ে বদলে দিতে পারেন আপনার ভবিষ্যত জীবন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বেশ
কিছু কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে যে কোর্সটি
করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা সেই কোর্সটি কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে
করতে কমপক্ষে খরচ পড়ে ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে
নির্ধারিত ফলাফল ও পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় তবে প্রাইভেট
প্রতিষ্ঠানসমূহে নিজেদের ইচ্ছামতো শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। তবে প্রাইভেট
কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের খুবই উন্নতমানের শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে ।
সরকারি বা বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক
নিয়ন্ত্রন করা হয় এবং পরীক্ষা শেষে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক
সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসকল কোর্স পরিচালনা করে থাকে তার মধ্যে রয়েছে –
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
এই কোর্সের মেয়াদ ৪ বছর এবং ৮ সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রতি সেমিস্টারের
মেয়াদ ৬ মাস।ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন কোর্সে দুই শিফটে ভর্তি করা
হয়। যেসকল শিক্ষার্থী বর্তমান বছরে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং পূর্ববর্তী ২ বছরে
উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা ১ম ও ২য় শিফটে আবেদন করতে পারেন।
কোর্সের বিষয় ও আসনসংখ্যাঃ
সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এই ইনস্টিটিউটগুলোতে যেসব বিষয়ে পড়নো হয়, সেগুলো
হলো: ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস,কেমিক্যাল, সিভিল, সিভিল (উড),
কম্পিউটার,আর্কিটেকচার, অটোমোবাইল, ফুড, পাওয়ার, মেকানিক্যাল, প্রিন্টিং,
গ্রাফিক ডিজাইন, গ্লাস, সিরামিক, ইলেকট্রো-মেডিক্যাল, মেরিন, শিপবিল্ডিং,
সার্ভেয়িং, মেকাটনিকস, কনস্ট্রাকশন, টেলিকমিউনিকেশন, এনভায়রনমেন্টাল,
রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি,
আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন, গার্মেন্টস ডিজাইন অ্যান্ড
প্যাটার্ন মেকিং, ইনস্ট্রুমেন্টেশন অ্যান্ড প্রসেস কন্ট্রোল, ডেটা
টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং, এয়ার ক্রাফট মেইনটেন্যান্সে
ইঞ্জিনিয়ারিং (এরোস্পেস), এয়ার ক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং
(এভিয়োনিকস) এবং মাইনিং অ্যান্ড মাইন সার্ভে টেকনোলজি।আসনসংখ্যা ৪০ থেকে
১৬০টি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত আরও ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করানো
হয়।
ভর্তি পরীক্ষার নিয়ামাবলীঃ
কারিগরি বোর্র্ডের নির্ধারিত সময় সীমাতে আপনাকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য
অনলাইনে ফরম ফিলাপ করে আবেদন করতে হবে। এসএসসি ফলাফল দেওয়ার আগ থেকে
বিভিন্ন পলিটেকনিক ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হতে পারেন। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ
শিক্ষকরা আপনাকে ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী করে গড়ে তুলবে। আর ভর্তি পরীক্ষার
ফরম ফিলাপের দায়িত্বটা কোচিং সেন্টারের দায়িত্বশীলরা নিয়ে নিবে। এ জন্য এটি
দেখতে পারেন
তাছাড়া ফরম ফিলাপ আপনি নিজে, সাইবার ক্যাফে, বিভিন্ন পলিটেকনিকের আশে
পাশের যে দোকান গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করা হয়, সেগুলো থেকে ফরম
ফিলাপ সম্পন্ন করতে পারেন অথবা ডিপ্লোমা পড়ুয়া বড় ভাইদের থেকে হেল্প নিতে
পারেন।
অনলাইনে ফরম পূরণ করার সময়ে ফর্মে আপনাকে টেকনোলজি বাছাই করার সুবিধা
দেওয়া হবে। আপনি যে কোন তিনটি টেকনোলজির নাম লিখতে পারেন (তার বেশীও দেওয়া
যায়)। যে পলিটেকনিক কলেজে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করতে চান সেই পলিটেকনিক
কলেজের নাম সিলেক্ট করে দিতে হবে। আর যে কলেজের কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষায়
অংশ নিতে চান সে কলেজের (ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র) নাম সিলেক্ট করে দিতে
হবে। উদাহরণ স্বরূপ আপনি ঢাকা সরকারী পলিটেকনিকে পড়তে চান তাই নাম সিলেক্ট
করলেন ‘ঢাকা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট’। কিন্তু বর্তমানে আপনি থাকেন
চট্টগ্রামে। ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আপনাকে ঢাকা যেতে হবে না। ভর্তি
পরীক্ষার কেন্দ্র ‘চট্টগ্রামের পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট’ সিলেক্ট করলেই হবে।
আপনি চট্টগামে বসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তারপর নির্ধারিত ফি
টেলিটক সিমের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। প্রবেশ পত্র, পরীক্ষার তারিখ, কেন্দ্র,
ভর্তি পরীক্ষার সিট নাম্বার অনলাইনে ফরম ফিলাপের সময় দেওয়া নিজের মোবাইল
নাম্বারে এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার আগে জানিয়ে দিবে।
লিখিত পরীক্ষার বিষয়সমূহঃ
৫০ নম্বরের লিখিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা ও
ইংরেজি থেকে ১৫ নম্বর, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন থেকে ১৫ নম্বর, গণিত থেকে ১৫
নম্বর এবং সাধারণ জ্ঞান ৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। এসএসসির জিপিএকে ১০ দ্বারা
গুণ করে প্রাপ্ত স্কোরের সঙ্গে লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে
মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হয়।
বৃত্তি/সুবিধাঃ ডিপ্লোমা –ইন –ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া মেধাবী, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে ৮০০টাকা হারে (অর্থাৎ প্রতি সেমিষ্টারে ৪৮০০ টাকা করে মোট ৩৮৪০০ টাকা)। বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়। সেমিষ্টার সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলা ফল করলে কলেজের পক্ষ থেকে প্রতি সেমিষ্টারে ৯০০টাকা হারে ( মোট ৯০০*৮=৭২০০ টাকা) বৃত্তি দিবে। আর ডিপ্লোমা ভর্তি পরীক্ষায় ১ম মেরিট লিস্টে আসা ৬০% শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে এককালীন ৯০০ টাকা বৃত্তির সুযোগ।
ক্যারিয়ারঃ
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করে
বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে ঢাকা প্রকৌশল ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), অ্যাসোসিয়েট মেম্বার অব দ্য ইনস্টিটিউট
অব ইঞ্জিনিয়ার্সসহ (এএমআইই) দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া
রয়েছে বিদেশেও পড়াশোনার সুযোগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের
জন্য বাড়ছে কর্মক্ষেত্র ও কাজের পরিধি। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায়
কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারদের বেশির ভাগই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। প্রতিবছর বেশ কিছু
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার চাকরির সুবাদে যাচ্ছেন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের
দেশগুলোয়।
সব মিলিয়ে বলতে হলে ডিপ্লোমা কোর্স শেষে আপনি কিছু না কিছু একটা করতে পারবেন।
সর্বশেষে বলতে চাই দরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যানে অগ্রণী ভুমিকা রাখুক এই প্রত্যাশায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আঃ রাজ্জাক ।
বিষয়ভিত্তিক কিছু কোর্সের বিবরণ
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি নামক
প্রতিষ্ঠানটি থেকেই শুধুমাত্র এই কোর্সটি করা যায়। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং
কোর্সটি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি মেরিন টেকনোলজি ও অন্যটি শিপবিল্ডিং
টেকনোলজি। এ দুটি কোর্সেরই মেয়াদ চার বছর। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এখানেও
মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজাতীয় কোটা সংরক্ষিত রয়েছে। ডিপ্লোমা পর্যায়ে দুটি
কোর্সে মোট ৪৮ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। কোর্স শেষে উপসহকারী
প্রকৌশলী হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলে শুরুতে বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার
টাকা হয়। সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ে এ কোর্স করা ছাত্রদের ভালো চাহিদা রয়েছে।
ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে চারটি বিভাগে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করা
যায়। বিভাগগুলো হচ্ছে ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং (এখানে তুলা ও পাটের আঁশ
থেকে সুতা তৈরি করা শেখানো হয়), ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং (সুতা থেকে কাপড়
তৈরি), ওয়েট প্রসেসিং (রং করা) ও ক্লথিং টেকনোলজি (গার্মেন্টস)। দেশে ছয়টি
সরকারি এবং ১৮টি বেসরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট রয়েছে। ভর্তির
জন্য কোনো লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না। সর্বোচ্চ জিপিএ পাওয়া
শিক্ষার্থীদের মেধাতালিকার ভিত্তিতে চারটি ডিপার্টমেন্টে ২০ জন করে মোট ৮০
জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। মেয়ে, আদিবাসী, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রবাসী
সন্তানদের জন্য আলাদা কোটা রয়েছে। কোর্স শেষে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিএসসি সম্পন্ন করা যায়। চাকরি ক্ষেত্রে সুতা
প্রস্তুতকারী কল-কারখানা বা গার্মেন্টে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এ পেশায় শুরুতে
বেতন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা হতে পারে। সরকারিভাবে দিনাজপুর, টাঙ্গাইল ও
বরিশালে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট রয়েছে। সরকারি ছাড়াও বর্তমানে
বেশ কিছু বেসরকারি ইনস্টিটিউট টেক্সটাইল টেকনোলজি চালু করেছে।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট:
www.bteb.gov.bd