করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। 2018 - রূপকল্প ২০৪১

উন্নয়নের অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ

Detail
৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা ২০১৮  অনুষ্ঠান চলাকালিন সময়ে।

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস- ২০১৮

Detail

বদলগাছী উপজেলা প্রশাসন এর উদ্যোগে পালিত হলো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস- ২০১৮
"সাক্ষরতা অর্জন করি
দক্ষ হয়ে জীবন গড়ি"

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট (অনূর্ধ্ব ১৭)

Detail
বদলগাছী উপজেলায় শুভ উদ্বোধন হলো 
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট (অনূর্ধ্ব ১৭) এর প্রতিযোগিতা।

জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম

Detail
১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন সমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা প্রথমে সোজাভাবে রশির সাহায্যে পতাকা দণ্ডের মাথা পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে। এরপর দণ্ডের মাথা থেকে পতাকার প্রস্থের সমান নিচে নামিয়ে পতাকাটি বাঁধতে হবে।

দিনশেষে পতাকাটি যখন নামাতে হবে তখন পতাকাটি আবার দণ্ডের মাথা পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে এবং তারপর ধীরে ধীরে নামাতে হবে।

পতাকা বিধিতে বলা হয়েছে, পতাকার রঙ হবে গাঢ় সবুজ এবং সবুজের ভেতরে একটি লাল বৃত্ত থাকবে। জাতীয় পতাকার মাপ হবে দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট।আয়তাকার ক্ষেত্রের গাঢ় সবুজ রঙের মাঝে লাল বৃত্ত এবং বৃত্তটি পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ ব্যসার্ধবিশিষ্ট হবে। ভবনে উত্তোলনের জন্য পতাকার তিন ধরনের মাপ হচ্ছে ১০ ফুট বাই ৬ ফুট , ৫ ফুট বাই ৩ ফুট এবং ২.৫ ফুট বাই ১.৫ ফুট।

ছেঁড়া বা বিবর্ণ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। মানসম্মত কাপড়ে যথানিয়মে তৈরি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। বাসস

বঙ্গবন্ধু কোন দলের নয়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের

Detail


স্বাধীনতার বয়স এখন ৪৭ বছর। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের ওপরে। এই ৪৭ বছরে আমাদের কত অর্জন, কতো ব্যর্থতা দৃশ্যমান। এই সব অর্জনে আমরা যেমন মাথা উঁচু করে বুক ফাটিয়ে স্লোগান দেই, খুশিতে আত্মহারা হই, ঠিক ব্যর্থতা দেখলে আমাদের শুধু মন খারাপই হয় না আজ, আমাদের শক্তি আর সাহস দুটোই হারিয়ে ফেলি ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের মতো। আজ আমাদের সবকিছুর মাঝে বঙ্গবন্ধু থাকলে কতই না সুন্দর হতো। তখন হয়তো আমরা এতটা বিভক্ত হতাম না। আমাদের এত দাবি থাকতো না আজ। এই বাংলাদেশ হয়তো বিশ্বের নেতৃত্বশীল দেশগুলোর একটি হতো। আমরা হতাম বিশ্বায়নের বিশ্ব।

নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে কালো অধ্যায়। এটা বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তিনি যেমন ভাবতে পারেননি, তেমনি বাংলার নিষ্পাপ মাটিতে বঙ্গবন্ধুর রক্তেভেজা নিথর দেহটি দেখে আমরা বাকরুদ্ধ হয়েছি। আজও সেই দৃশ্য যখনই আমরা দেখি, মনের অজান্তেই আমরা অভিশাপ দেই নিজেদের। এতটা বর্বরতা কিভাবে সম্ভব কোন মানুষের পক্ষে? স্বাধীনতার পর মাত্র ৪ বছরের মাথায় বাংলার মাটি রক্তে লাল হয়েছে শেখ মুজিবের রক্তে। ত্রিশলক্ষ্য শহীদ আর দুলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের ক্ষত শুকাতে না শুকাতে মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়ককে হত্যা করা হলো। সেদিন আমরা হারিয়েছি রাজপথের মহানায়ককে। আমরা হারিয়েছি স্বাধীনতার কাণ্ডারিকে। আমরা হয়ে গেছি এতিম। তবুও আজ আমাদের যত অর্জন আর যত ব্যর্থতা সবই ঘিরে আছে একটি নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। আজ যেন বাংলাদেশেরই অপর নাম ‘বঙ্গবন্ধু’।

ঘাতকেরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে মারলেই বাংলা হয়ে যাবে ঘাতকদের রাজত্ব। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার মানুষের জন্যে দ্বিতীয় জীবনের অনুপ্রেরণা। যে নামে কবি কবিতা লিখতো আর মাঝি গলা ছেড়ে মাঝ দরিয়ায় সুর তুলতো মিষ্টি কণ্ঠে…‘তুমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, একাত্তরে জন্ম নেওয়া বাঙ্গালীর আরেক না…’।

৭৫ এর ১৫ আগষ্টের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মরণ ঘটেছে সত্য, কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন বাংলার মুক্তিপাগল গণমানুষের হৃদয়ে। যেভাবে শিশুর পিতা ঘুমিয়ে থাকে সব শিশুর অন্তরেভ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। সেজন্যে মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালে শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী সন্তান ও আমাদের কাছে সম্মানিত। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের জন্যে পাকিস্থান সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ৭ ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণই ছিল মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মূলমন্ত্র। বঙ্গবন্ধু ইতিহাসে আজ সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙ্গালীর স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু আজীবনই আমাদের কাছে প্রিয় নেতা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবির্ভাবের আগে বাঙালির প্রিয় নেতা ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন ব্রিটিশদের বলয়ে থেকে। তিনি ব্রিটিশ ভারতের পরাধীন মানুষকেও সে স্বপ্ন পূরণে রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, নেতাজি তাঁর জীবদ্দশায় নিজ দেশকে স্বাধীন দেখে যেতে পারেননি। আমাদের বঙ্গবন্ধু  পাকিস্তানিদের বলয়ে থেকে বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।  আমাদের বঙ্গবন্ধু দেখে যেতে পেরেছিলেন স্বাধীনতা।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের অধিকারের জন্যে, স্বাধীনতার জন্যে বঙ্গবন্ধুর মতো কাজ করে গেছেন অনেকেই। তবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন একেবারেই আলাদা। বিশেষ করে আমাদের কাছে বঙ্গবন্ধু জীবর আর মরণের মতো ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলাকে বঙ্গবন্ধুর সাথে তুলনা করছি আমি। তাঁরা দুজনেই জীবনের দীর্ঘ সময় কারান্তরালে কাটিয়েছেন, নিগ্রহের মুখোমুখি হয়ে আপসের কথা ভাবেননি। বঙ্গবন্ধু আর ম্যান্ডেলার মধ্যে মিল হলো যে স্বপ্ন তাঁরা দেখেছিলেন—মুক্ত, স্বাধীন স্বদেশ—নিজের জীবদ্দশাতেই তার বাস্তবায়ন দেখে গেছেন।

যে সময় বঙ্গবন্ধু তরুণ এবং দীপ্ত কৈশর, তখন নেতাজি কলকাতার মেয়র ও কংগ্রেসের নেতা। পৃথিবীর তিনপ্রান্তে সংগ্রামী তিনমুখ বঙ্গবন্ধু, নেতাজি সুভাষ বসু এবং ম্যান্ডেলা কেউ কারো সঙ্গে কখনো মুখোমুখি বসার সুযোগ আসেনি, কিন্তু তিন নেতা এক অদৃশ্য সুতোয় একে অপরের সঙ্গে বাঁধা ছিলেন। তাঁরা তিনজনই পরাধীন জাতির মুক্তির সফল স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। শুধু নিজ নিজ দেশ বা জাতির নয়, পৃথিবীর যেখানেই নিপীড়িত মানুষ স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন, এই তিন নেতা তাঁদের জন্য আশার প্রতীক হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের অভিন্ন উদ্দেশ্য মানুষকে অত্যাচার, অন্যায় এবং গণতন্ত্রের মুক্তি দিয়েছে। তাঁরা তিনজনই নিজের উদাহরণে ব্যক্তি আমি থেকে আমরা হয়ে ওঠতে পেরেছেন।

গণমানুষের জন্যে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির হাতেখড়ি ১৬ বছর বয়সে। স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গ নিয়ে মানুষের সাথে মেশা শুরু করেন যে বঙ্গবন্ধু সেই বঙ্গবন্ধুই এক সময় হয়ে ওঠেন বাঙ্গালীর পরিচয়। বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়তে গিয়ে কারাবরণের বিভিন্ন স্মৃতিতে অশ্রু টলমল করেছে আমার। আমি মনে করি এটা সবার পড়া উচিত। তাহলে আমাদের মনের অন্ধকার দূর হবে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে।
 বেশি দূর পড়া যায় না, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে বর্ণমালা গুলোর উচ্চারণে।

বঙ্গবন্ধু ১৬ বছর বয়সে যে স্বদেশ প্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, ২০১৮ সালে এদেশের তরুণ প্রজন্ম তেমনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গতকাল ১৩ আগষ্ট কুর্মিটোলায় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, বাচ্চারা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে বাচ্চাদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন ইতিবাচক মন্তব্যকে আমি অভিনন্দন জানাই।

রাজনীতিতে ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে আদর্শ অনেক বড়, এই চেতনা বঙ্গবন্ধু অর্জন করেছিলেন নিজের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে। ম্যান্ডেলাও তাই করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী অান্দোলনে কারাবরণকারী ম্যান্ডেলাকে সরকার বারবার প্রস্তাব দিয়েছে, রাজনৈতিক বিরোধিতা ত্যাগ করলে মুক্তি পাবে। কিন্তু ম্যান্ডেলা রাজি হননি। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধানমন্ত্রীর চিঠির প্রস্তাবও ম্যান্ডেলা জেল থেকেই দিলেন এভাবেই—‘নিজের মুক্তি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার জনগণের মুক্তি। আমি আমার জন্ম-অধিকার বিক্রি করতে পারি না, যেমন বিক্রি করতে পারি না আমার মানুষের মুক্ত হওয়ার অধিকার। আমি জেলে আসার পর অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছেন। সেসব সন্তানহীন বাবা-মা, স্বামীহারা বধূ ও বাবাহারা সন্তানদের প্রতি আমার ঋণ ভুলে এই মুক্তি আমি চাই না।’

বঙ্গবন্ধুকেও ক্ষমতার লোভ দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীত্ব হবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন গণমানুষের কথা ভেবে। আমাদের স্বাধীনতার কথা ভেবে। আমাদের মুক্তির জন্যে জড়ো করেছেন। সংগ্রামী করে তুলেছেন। স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আজ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা আছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু নেই। আজ আমাকে লিখতে হচ্ছে তিনি ছিলেন। খুবই দু:খ হয় ছিলেন লিখতে কিন্তু নির্মম সত্যটা আজ সবাইকেই লিখতে হচ্ছে, লিখছিও তাই।

নেতাজি, বঙ্গবন্ধু অথবা ম্যান্ডেলা—কেউই এখন আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু ইতিহাসে আজও জীবন্ত তাঁদের কর্ম আর ত্যাগ। কীভাবে তাঁদের মনে রাখব, তার দায়ভার তাঁদের নয়, আমাদের। ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সবার স্মরণ করা উচিত শ্রদ্ধার সাথে। বঙ্গবন্ধু কোন দলের নয়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের। অন্তত বাঙ্গালী জাতি হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতেও বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা উচিত। যদি আমরা বঙ্গবন্ধুকে অহিংস আত্মায় সম্মান দিতে না পারি, তাহলে আজ  বাংলাদেশ অসম্মানিত হবে। বাংলাদেশ ভাগ হতে পারে। বাংলাদেশে আবারো ১৫ আগষ্ট ঘটতে পারে। বাংলাদেশ পথ হারাতে পারে…।

লেখক : আরিফ চৌধুরী শুভ।।

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট

Detail

শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন শেষে খেলোয়ারদের মাঝে সুযোগ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বদলগাছী জনাব মাসুম আলী বেগ, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষকবৃন্দ।

আজ উপজেলা পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা  গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা। প্রধান অতিথি হিসেবে খেলা উদ্বোধন করেন মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মো: ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম। বিশেষ অতিথি সুযোগ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মাসুম আলী বেগ, সহকারী কমিশনার(ভুমি) জনাব মো: রওশন আলী,উপজেলা প্রকৌশলী জনাব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, অফিসার ইনচার্জ জনাব মো: জালাল উদ্দীন,চেয়ারম্যান সদর ইউপি জনাব মো: আ: সালাম,চেয়ারম্যান মথুরাপুর ইউপি জনাব মো: আ:রহমান,চেয়ারম্যান বিলাশবাড়ী জনাব মো: সাইদুর রহমান কেটু,চেয়ারম্যান আধাইপুর ইউপি জনাব মো: জাকির হোসেন,সা: সম্পাদক উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা জনাব এম জামান পিন্টু। উল্লেখ্য যে চ্যাম্পিয়ন ও রানার-আপ দলকে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ হতে প্রাইজ মানি প্রদান করা হবে।

অসাধারন একটি ইতিহাস, না দেখলেই যেন নয়।

Detail
কারন ইতিহাস যে কথা কয়!

অসাধারন একটি ইতিহাস, না দেখলেই যেন নয়।


ফুটবল খেলা যে এমন দৃষ্টিনন্দন হয় তা তো দেখতেই হয়।

কোন MB ছাড়াই নিয়মিত ভিজিট করুন Uno Badalgachi ব্লগ!

Detail

কোন MB ছাড়াই নিয়মিত ভিজিট করুন 

Uno Badalgachi ব্লগ!

 

Uno Badalgachi ব্যাবহার করতে আপনাকে এখন ডাটা খরচ করতে হবেনা! MB খরচের চিন্তা ছাড়াই এখন সবসময় যুক্ত থাকুন

Uno Badalgachi এর সাথে এবং জানতে থাকুন,  শিখতে থাকুন! 

কীভাবে ফ্রিতে ডাটা ছাড়াই

Uno Badalgachi ব্যাবহার করবেন সেটা নীচে ছবিসহ দেখানো হলোঃ

১। প্রথমে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এ লগইন করে Menu তে যান এবং Free Basics ট্যাবে ক্লিক করুন।

 ২। এবার ভাষা (বাংলা/ইংরেজি) সিলেক্ট করে পরবর্তী চাপুন।

 

 ৩। এখন আপনি এরকম একটি পেজ দেখে পারবেন। স্ক্রল করে পেইজের একদম নীচে চলে যান এবং "আরও বিনামূল্যের পরিষেবা যোগ করুন" অথবা “Add More Services” লিখাটিতে ক্লিক করুন।

ক্রল করে নীচের অংশে যাওয়ার পর...

 ৪। সার্চ অপশনে Uno Badalgachi লিখে সার্চ করুন।


 ৫। এবার আপনি Uno Badalgachi লিস্টে দেখতে পারবেন। যোগ (+) চিহ্নে ক্লিক করুন এবং যোগ করুন।


 
৬। অভিনন্দন! এখন থেকে আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে কোন MB ছাড়াই Uno Badalgachi ব্যাবহার করতে পারবেন।
৭। পরবর্তীতে যেকোনো সময় Uno Badalgachi ভিজিট করতে হলে মেন্যু থেকে Free Basics এ ঢুকে "সর্বাধিক ব্যাবহৃত" বা "Most Used” ট্যাব থেকে ক্লিক

Uno Badalgachiএ ক্লিক করুন এবং ভিজিট করুন!

যেকোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করতে পারেন। ইউএনও বদলগাছী একটি বিনামূল্যের শিক্ষা বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম। সবার সাথে ছড়িয়ে দিন এই ব্লগটি। নিজে শিখুন এবং অন্যদের শিখান! সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। 


আসুন জেনে নেই কম্পিউটার স্লো হয়ে গেলে করনীয় কি?

Detail
অধিকাংশ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের প্রথম ও প্রধান সমস্যা হলো তার কম্পিউটারটি স্লো কাজ করছে, এমন অবস্থায় করনীয় নিয়ে অনেক দ্বিধা থাকলে ও নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করলে এমন সমস্যা হতে অতি সহজেই পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

নতুন কম্পিউটার কিনেছেন। কেনার প্রথমদিকে নতুন শ্বশুর বাড়ির মতোই কম্পিউটার আপনাকে খাতির যত্ন করবে। তারপর একসময় ধীরে ধীরে কম্পিউটারের গতি কমতে থাকে। দেখা গেলো, একটি ফোল্ডার ওপেন করার পর খুলতে এতোই সময় লাগে যে এই সময়ে আপনার একটা ভালো ঘুম হয়ে যায়। তবে কম্পিউটারের গতি বাড়ানো যায় বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে। চলুন জেনে নেই তেমন কিছু বিষয়-
১) কম্পিউটারে কখনো থিম, অ্যানিমেটেড ওয়ালপেপার, ইন্সটল করা উচিত নয়।থিম কম্পিউটারকে অনেক ধীর করে দেয়।
২) রিসাইকেল বিন সব সময় ফাঁকা রাখুন।  রিসাইকেল বিনে কোনও ফাইল রাখবেন না।
৩) Start থেকে Run-এ ক্লিক করে এক এক করে Prefetch, temp, %temp%, cookies, recent লিখে ok করুন। ফোল্ডারগুলো খুললে সবগুলো ডিলিট করে ফেলুন। কিছু সময় পরপর Start থেকে Run-এ ক্লিক করে tree লিখে ok করুন। এতে র‌্যামের কার্যক্ষমতা বাড়বে।

৪) My Computer খুলে সি ড্রাইভের ওপর মাউস রেখে ডান বাটনে ক্লিক করে Properties-এ যান। তারপর Disk Cleanup-এ ক্লিক করে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। নতুন উইন্ডো এলে বাঁ পাশের সবগুলো বক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে ok করুন। এভাবে প্রত্যেকটি ড্রাইভ ক্লিন করতে পারেন।
৫) ভাইরাসের কারণে পিসি স্লো হয়ে যেতে পারে। এজন্য নিয়মিত ভাইরাস স্ক্যান করুন। অ্যান্টি ভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভুলেও এক পিসিতে একাধিক অ্যান্টি ভাইরাস ব্যবহার করবেন না।
৬) অতিরিক্ত ধুলা-বালির জন্য কম্পিউটার স্লো হয়ে যেতে পারে। এজন্য মাসে অন্তত একবার হলেও সিপিইউ খুলে এর ধুলাবালি পরিষ্কার করা উচিত।
৭) সি ড্রাইভের অপ্রয়োজনীয় ডাটা অন্য ড্রাইভে রাখুন।
৮) অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার পিসি থেকে আনইন্সটল করে ফেলতে পারেন। এর কারণেও অনেক সময় পিসি স্লো হতে পারে।
৯) আপনার কম্পিউটার এর ভার্চুয়াল মেমরি বাড়িয়ে রাখুন।
১০) ১ মাস পরপর আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং হিস্টরি এবং কুকিস মুছে ফেলুন। তাতে আপনার ব্রাউজারের গতি বাড়বে।  একসাথে ব্রাউজারে বেশি ট্যাব খুলে রাখবেন না। যে ট্যাবটি দরকার শুধু সেটিই খুলুন। কাজ শেষ হলে পুরনোটা কেটে আবার নতুন একটি খুলুন। আর ব্রাউজারে অ্যাডস অন ব্যবহার করবেন না।
১১) মাস খানেক পর কম্পিউটার এর র‌্যাম খুলে পরিষ্কার করে আবার লাগান, তাতে মাঝে মাঝে রিস্টার্ট হওয়া কিংবা ডিসপ্লে না আসার সমস্যা কমবে।
১২) অটোমেটিক আপডেট এবং ফায়ারওয়াল অফ করে রাখুন।
১৩) যেসব প্রোগ্রাম কিংবা সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন না, এগুলো একেবারে ক্লোজ করে রাখুন। কারণ ক্লোজ না করলে এই প্রোগ্রাম কিংবা সফটওয়্যারগুলো আপনার পিসির র‌্যামের জায়গা দখল করে আপনার পিসিকে স্লো করে রাখবে।
১৪) আপনার কম্পিউটার নিয়মিত বন্ধ করুন। অনেকেই আছে সবসময়ই খুলে রাখেন নিজেদের পিসি অথবা ল্যাপটপ যা করা একদমই উচিত নয়।
১৫) বড় সাইজের ফাইল কম্পিউটার থেকে সরিয়ে ফেলুন।
১৬) কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার কেনা।

সূত্রঃ আরটিভিঅনলাইন

এটিএম বুথে নকল টাকা

Detail
এটিএম বুথে নকল টাকা পাওয়া যেন খুবই একটা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে, আর এই সাধারণ ঘটনার কথা যখন ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানানো হয়, তখন তাদের আচরনে মনে হয় এইটা একটা বিরাট অসাধারণ ঘটনা যা কখনোই ঘটতে পারে না, যদিও তা ঘটে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জেনে রাখা দরকার।
এটিএম-এ যদি নকল নোট হাতে আসে, তখন কি করা যায়? কেননা সেই মুহূর্তে কেউ এর সাক্ষী থাকে না। এটিএম-এ নকল নোট রুখতে বিভিন্ন ধাপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই নকল নোট না আসাই উচিত। তাও যদি আসে তবে বিপাকে পড়তে হয় গ্রাহককে। কেননা বিদেশে এটিএম রিসিপ্টে কারেন্সির নম্বর উল্লেখ থাকে, কিন্তু বাংলাদেশে শুধু কত টাকা তোলা হচ্ছে তার অ্যামাউন্টই উল্লেখ থাকে। এই পরিস্থিতিতে হাতে নকল নোট এলে একজন গ্রাহক কি করবেন?
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এরকম সন্দেহ হলে প্রথমেই নোটটি সিসিটিভি-র সামনে ধরা উচিত। যাতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে নোটটি এটিএম-থেকেই পাওয়া গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এটিএম-এ যে নিরাপত্তারক্ষী আছেন তার কাছে নোটের ডিটেলস দিয়ে অভিযোগ দায়ের করে রাখা শ্রেয়। এতে নোটটি এটিএম থেকে কোন সময়ে বেরিয়েছে, তা স্পষ্ট হবে। সেই সঙ্গে যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে রিজার্ভ ব্যাংকেও।

পাশাপাশি পুলিশের কাছেও অভিযোগ দায়ের করতে হবে। তদন্ত চলাকালীন এই সিসিটিভি ফুটেজই প্রমাণ করবে নোটটি এটিএম থেকে বেরিয়েছে। প্রমাণ দেবে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে জমা হওয়া অভিযোগও। একই সঙ্গে ব্যাংকও জানাবে যে গ্রাহক, এই অসুবিধার কথা জানিয়েছেন,

এই প্রমাণগুলিই গ্রাহকের টাকা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। সাধারণ কোনও বড় অ্যামাউন্টের টাকার মধ্যে নকল নোট চলে এলে মাথায় হাত পড়ে গ্রাহকের। এ নিয়ে আতান্তরে পড়তে হয়। তাই সন্দেহ হলে আগাম সাবধানতা অবলম্বন করাই বাঞ্ছনীয়।
সূত্রঃ সময়নিউজ

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার চত্বরে আন্তর্জাতিক বৈশাখ ডে উদযাপন অনুষ্ঠান

Detail
ঐতিহ্যমন্ডিত ঐতিহাসিক স্থান সোমপুর (পাহাড়পুর) বৌদ্ধ বিহার চত্বর আন্তর্জাতিক বৈশাখ ডে উদযাপন সদ্ধর্মসভা অষ্টপরিষ্কার সহ সংঘদান প্রব্রজ্যাদান ও দি বুড্ডিষ্ঠ ট্ররিজম এর উদ্বোধনী অনুষ্টান ১৮ মে শুক্রবার দিবসব্যাপী জ্ঞান সারথী অধ্যাপক জ্ঞানরত্ন মহাস্থবির বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সাংগঠনিক সম্পাদক এর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত হয়। যথাক্রমে উদ্বোধক অধ্যাপক ডা: উত্তম কুমার বড়ুয়া পরিচালক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঢাকা, প্রধান ধর্মদেশক চট্রগ্রাম পালি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড: জ্ঞানরত্ন মহাস্থবির ,, সদ্বর্মদেশক এল অনুরুদ্ধ মহাস্থবির , বোধিমিত্র থের প্রধান অতিথী জনাব মো: ছলিম উদ্দীন তরফদার এম পি (বদলগাছী মহাদেবপুর)।

 প্রধান বক্তা ড: এ কে আব্দুল মোমেন সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি,
 জাতিসংঘ বিশেষ অতিথী জনাব মো: মিজানুর রহমান জেলা প্রশাসক, নওগাঁ
 জনাব মো: ইকবাল হোসেন পুলিশ সুপার, নওগাঁ । 
জনাব মাসুম আলী বেগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বদলগাছী নওগাঁ 

ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে- স্বল্প মেয়াদী আইসিটি প্রশিক্ষণ গ্রহন করুন।

Detail
সম্প্রতি বাংলাদেশ ডিজিটাল সু-সরকার বদলগাছী উপজেলার প্রায় ৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাস গ্রহন এবং স্কুল পরিচালনার লক্ষ্যে ল্যাপটপ প্রদান করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অধিকাংশ শিক্ষকগনই সে ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট এর সঠিক ব্যবহার ও পরিচালনার জন্য তেমন কোন প্রশিক্ষন  পাননি। যার করণে সরকাররে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ব্যহত হচ্ছে। তাই সম্মানিত শিক্ষকগনকে  অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানানো যাচ্ছে যে, 
 ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে-
বদলগাছী উপজেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্লাব - এর উদ্দ্যোগে

 ডিজিটাল ক্লাস কন্টেন্ট দ্বারা ক্লাস গ্রহণ সহজ এবং সাবলীল করতে ক্লাব - সময়  উপযোগী প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করার পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। আপনাদের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ও অংশগ্রহন প্রত্যাশা করছি। যার মাধ্যমে শুধু শিক্ষকগনই নন সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে আত্ম প্রকাশ করতে সক্ষম হবে।
 আর এতে করে ভিশন ২০২১ বাস্তাবয়নে  বদলগাছী উপজেলা সরাসরি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
আমাদের সেবা সমূহঃ
১। স্বল্প মেয়াদী এবং কার্যকরী ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং প্রশিক্ষণ প্রদান।
২। বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়ার, সফটওয়ার, অনলাইন, অফলাইন সমস্যা সমাধান এবং অনলাইন নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ প্রদান।
৩। নেটওয়ার্কিং, ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সহ প্রয়োজনীয় সকল অফিস প্রোগ্রাম প্রশিক্ষণ।
৪। প্রাক প্রাথমিক বিজয় ডিজিটাল কন্টেন্ট , লাইসেন্স সংস্করণ।
৫। প্রথম হতে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত সকল ডিজিটাল কন্টেন্ট সরবরাহ ও তার ব্যবহার।
৬। গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং এবং প্রয়োজনীয় হার্ডকপি, সফট কপি প্রদান।
৭। নিজের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইমেইল, ব্লগ, ওয়েবসাইট এবং ফোরাম পরিচালনা করা।
৮। দূরবর্তী শিক্ষকদের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান সুবিধা প্রদান করা হবে।

উপরে উল্ল্যেখিত সেবা গ্রহনে শিক্ষক সমাজ হয়ে উঠবে ডিজিটাল এবং দক্ষ। যারা দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে আরো অগ্রগামী ।

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুনঃ
বদলগাছী উপজেলা আই.সি.টি প্রশিক্ষন কেন্দ্র
পশু হাসপাতার সংলগ্ন,
বদলগাছী, নওগাঁ।
০১৭৯৫-৬৩৫৮৭২ (তাইয়েব), ০১৭১৭-২২৯৬১৭ (শামীম)
                       ফেসবুক পেজঃ https://web.facebook.com/bubpc

মহাকাশে যাত্রার চূড়ান্ত ক্ষণে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১

Detail

 আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১২ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হতে পারে।

প্রজেক্টরের মাধ্যমে সর্ব সাধরণকে এই ঐতিহাসিক ঘটনা দেখার সুযোগ করে দিতে বদলগাছী উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনিয়  পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।


যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হবে। উৎক্ষেপণ সফল হলে বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হবে বাংলাদেশ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন সেবা ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো যাবে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মুহূর্তটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের সব কটি বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। দুর্লভ এ মুহূর্ত সরাসরি প্রচারের ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের সব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সও উৎক্ষেপণ মুহূর্তটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
কেনেডি স্পেস সেন্টারের দুটি স্থান থেকে আগ্রহী দর্শনার্থীরা এই উৎক্ষেপণ দেখতে পারবেন। একটি স্থান অ্যাপোলো সেন্টার, উৎক্ষেপণস্থল থেকে দূরত্ব ৬ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। উৎক্ষেপণের দৃশ্য কেনেডি স্পেস সেন্টারের মূল দর্শনার্থী ভবন (মেইন ভিসিটর কমপ্লেক্স) থেকেও দেখা যাবে। উৎক্ষেপণ স্থল থেকে এটির দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এ মুহূর্তের সাক্ষী হতে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধিদল কেনেডি স্পেস সেন্টারে উপস্থিত থাকবে।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে।
দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট তৈরিতে খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ ঋণ দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।
স্যাটেলাইট তৈরির এই পুরো কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তত্ত্বাবধানে। তিনটি ধাপে এই কাজ হয়েছে। এগুলো হলো স্যাটেলাইটের মূল কাঠামো তৈরি, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। স্যাটেলাইট তৈরির কাজ শেষে গত ৩০ মার্চ এটি উৎক্ষেপণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাঠানো হয়। সেখানে আরেক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে স্যাটেলাইটটি আজ মহাকাশে যেতে পারে। স্যাটেলাইট তৈরি এবং ওড়ানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এ জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে তৈরি গ্রাউন্ড কনট্রোল স্টেশন (ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। আর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাঙামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন।

শুরুর ইতিহাস
বাংলাদেশে প্রথম স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। সে সময় মহাকাশের ১০২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে কক্ষপথ বরাদ্দ চেয়ে জাতিসংঘের অধীন সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নে (আইটিইউ) আবেদন করে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের ওই আবেদনের ওপর ২০টি দেশ আপত্তি জানায়। এই আপত্তির বিষয়টি এখনো সমাধান হয়নি। এরপর ২০১৩ সালে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বর্তমান কক্ষপথটি কেনা হয়। বাংলাদেশ বারবার আইটিইউর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত নিজস্ব কক্ষপথ আনতে পারেনি।
জাতিসংঘের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্সের (ইউএনওওএসএ) হিসাবে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত মহাকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৫। প্রতিবছরই স্যাটেলাইটের এ সংখ্যা ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এসব স্যাটেলাইটের কাজের ধরনও একেক রকমের। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি বিভিন্ন ধরনের মহাকাশ যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করা হবে। এ ধরনের স্যাটেলাইটকে বলা হয় ‘জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট’। পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে এ স্যাটেলাইট মহাকাশে ঘুরতে থাকে।
দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট ব্র্যাক অন্বেষা প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখন নিজেরাই স্যাটেলাইট বানানোর দক্ষতা অর্জন করেছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশেই নিজস্ব যোগাযোগ স্যাটেলাইট তৈরি করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তৈরি না হলে এসবের কিছুই হতো না।’
বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। এসব চ্যানেল সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে চ্যানেলগুলোর খরচ হয় ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে এই স্যাটেলাইট ভাড়ার অর্থ দেশেই থেকে যাবে। আবার স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার বা সক্ষমতা অন্য দেশের কাছে ভাড়া দিয়েও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সুযোগ থাকবে। এই স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে।
মহাকাশে যে কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন করা হবে, তা দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য ব্যবহার করা কঠিন হবে বলে মনে করেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশের যেখানে স্থাপন করা হবে, তা দিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোর জন্য হবে একটি চ্যালেঞ্জ। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যাতে এ স্যাটেলাইটের সুবিধা পায়, সে জন্য যা দরকার তা করতে হবে।
এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহারে দেশীয় চ্যানেলগুলোর কোনো সমস্যা হলে তা সমাধান করা হবে। বিটিআরসি নতুন প্রযুক্তির প্রতি খুবই উদার। এ বিষয়ে ব্যবহারকারীদের যেকোনো প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া ঠিক থাকলে স্যাটেলাইটটি আজ রাতের নির্ধারিত সময়েই উৎক্ষেপণ হবে।
সূত্র: প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কি এবং কেন?

Detail

অনেকের মনে যে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক সেটা হল, স্যাটেলাইট কি? আর এটা দিয়ে কি হয়? এটা সাধারণ মানুষের কতটুকু কাজে লাগবে?
খুব সহজ ভাবে বললে, মানুষের তৈরি উপগ্রহকে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট বলে। বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট আগামী ৭ মে উৎক্ষেপণ হবে। কয়েক বছর আগেও যে জিনিস নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতাম তা এখন সত্যি হতে চলেছে। হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কথাই বলছি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তৈরি করেছে ফ্রান্সের কোম্পানি। এরপর পাঠানো হয়েছে ইউএস এর ফ্লোরিডাতে। যুক্তরাষ্ট্রের রকেট নির্মাতা সংস্থা স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হবে। এটির গ্রাউন্ড স্টেশন গাজীপুর। সব কাজ শেষ। এখন কেবল উৎক্ষেপণের অপেক্ষা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে সুবিধা পাওয়া যাবে:
* নিজস্ব স্যাটেলাইট তাই মহাকাশ সম্পর্কে বেশি জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হবে। মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
* বাণিজ্যিক ভাবে বেশি লাভ হবে। এই স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। যার মধ্যে ২০টি দেশের কাজে ব্যবহৃত হবে আর ২০টি ভাড়া দেওয়া হবে। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে প্রচুর পরিমান টাকা বাইরের দেশে চলে যায়, যার পরিমান ২ লাখ ডলার। আমরা বর্তমানে সিঙ্গাপুরের স্যাটেলাইট ব্যবহার করি। আমরা এই স্যাটেলাইট ভাড়া দি্লে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব হবে। এতে করে দেশের টাকা দেশে থাকবে আবার বাইরের দেশ থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
* আবহাওয়া সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানা যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা যাবে।
* মিলিটারিদের জন্য খুব সুবিধা হবে। কারণ তারা স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে। স্যাটেলাইট ফোন হল যে ফোনো ট্রেস করা যায় না। এটি কোনো তারের মাধ্যমে চলে না।
* সমুদ্র, বন নিয়ে রিসার্চ করা যাবে অনায়াসে।
* ইন্টারনেট সহজলভ্য হবে। এটি আরো অনেক স্মুথ হয়ে আসবে। কমিউনিকেশন ডেভেলপ না করতে পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হবে না।

উল্কাপাত কি ও কেন?

Detail
দিনের বেলায় আকাশে তাকালে, আমরা কী কী দেখতে পাই? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে নানান রকম পরিবেশ পরিস্থিতির কথা আমাদের মনে উঁকিঝুঁকি দেবে। যদি ঘন মেঘে আকাশ থাকে আচ্ছন্ন, তবে তো মেঘ ছাড়া আর কিছু দেখাই যাবে না। আর যদি হয় মেঘমুক্ত আকাশ, তাহলেই কি খুব বেশি তফাৎ কিছু হবে? না। কারন,উজ্জ্বল সূর্যালোকের প্রভাবের কারণে আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে বাদ দিতে হবে, উড়ন্ত পাখি বা উড়োজাহাজকেও। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা হব-হব, অন্ধকার ডানা ছড়িয়ে গ্রাস করছে বসুধাকে, তখন মহাজাগতিক বিস্ময়ের এক দুয়ার খুলে যায় আমাদের চোখের সামনে। মেঘমুক্ত রাতের আকাশে দেখা দিতে পারে “ঝলসানো রুটি” সম পূর্ণিমা চাঁদ, স্থির উজ্জ্বল অপলক নক্ষত্র বা মিটমিট করতে থাকা শতশত তারা। আমাদের পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ তার উপস্থিতি দিয়ে রাতের আকাশের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এছাড়াও রাতের আকাশে মাঝেমাঝে দেখা যায় আর এক বিশেষ প্রকার মহাজাগতিক বস্তু। নগ্ন চোখ দিয়ে যখন আমরা রাতের আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করি, মাঝেমাঝে আমরা কিছু এলাকা জুড়ে পৃথিবীর দিকে ধাবিত কিছু আলোর মত বস্তু দেখতে পাই যা দীর্ঘ লেজ বিশিষ্ট ধূমকেতু থেকে তৈরি হয়। এই বিশেষ প্রজ্বলিত বস্তু, যদি পৃথিবী পৃষ্ঠতলের ওপর পতিত হওয়ার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় তখন সেগুলিকে আমরা বলি “উল্কা”। অর্থাৎ, উল্কা হল মহাকাশে পরিভ্রমণরত পাথর বা ধাতু দ্বারা গঠিত ছোট মহাজাগতিক বস্তু যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুর সংঘর্ষে জ্বলে উঠে। আর বায়ুমণ্ডলে নিঃশেষিত না হয়ে যদি আছড়ে পড়ে ধরণীপরে, তখন তাকে বলি উল্কাপিণ্ড। এই দুই-এ মিলে হয় উল্কাপাত (চিত্র ১)। একটি সহজ বীজগাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে যদি দেখি, তাহলে
উল্কাপাত (Meteoroid) = উল্কা (Meteor) + উল্কাপিণ্ড (Meteorite)

চিত্র ১। বায়ুমণ্ডলে প্রজ্বলিত উল্কা ও ভূমিতে পতিত উল্কাপিণ্ড
ভিডিওটি দেখলে ব্যাপারটি আরও সহজবোধ্য হবে। (লিংক)
উল্কাপিণ্ড গ্রহাণুর তুলানায় আকারে অনেক ক্ষুদ্র। যখন কোন উল্কা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন এর গতিবেগ সেকেন্ডে প্রায় ২০ কিমি. হয়। অধিকাংশ উল্কাই সৌরজগতের মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যে অবস্থিত একটি উপবৃত্তাকার গ্রহাণু বলয় থেকে আসে। এই গ্রহাণু বলয় ছাড়াও, উল্কা সৌরজগতের অভ্যন্তর অঞ্চল থেকেও উৎপত্তি লাভ করতে পারে। আর এই কারণেই, পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর পাওয়া বেশ কিছু উল্কা চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। কোন একটি পৃথিবী-বহির্ভূত বস্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যখন ঢোকে তখন কী ঘটনা ঘটে? বস্তুটির চাপ, তাপমাত্রা, উপাদান, ভর প্রভৃতি পরিবর্তিত হয়। আর কী হয়? বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানের সঙ্গে বস্তুর সংঘর্ষ ঘটে ও রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পাদিত হয়। ফলে বস্তুর অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে উল্কার বহিঃপৃষ্ঠ পুড়িয়ে দেয়। এসময়ে এ্যারোডাইনামিক্স তাপের কারনে উজ্জ্বল আলোক ছটার সৃষ্টি হয় আর একে “তারা খসা” (Shooting Star) বলি। কিছু কিছু উল্কা একই উৎস হতে উৎপন্ন হয়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভেঙে প্রজ্জ্বলিত হয় যাকে বলি উল্কা বৃষ্টি (চিত্র ২)।

চিত্র ২। তারা খসা ও উল্কা বৃষ্টি
উল্কা সংগ্রহের পদ্ধতির উপর নির্ভর করে, এদের দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। উল্কা পতনের সময় এটা যদি দৃশ্যমান হয় আর তারপর একে সংগ্রহ করা হয় তাহলে একে বলা হয় “FALL”, আর অন্য যে কোন উপায়ে যদি এটা সংগ্রহ করা হয়, তাহলে একে “FIND” বলা হয়। সাধারণত, উল্কাকে তিনটি দলে ভাগ করা হয় (চিত্র ৩)। এগুলি হলো –
  1. স্টোনি উল্কা (Stony meteorites): এরা প্রধানত সিলিকেট খনিজ দ্বারা তৈরি। অধিকাংশ উল্কাই এই শ্রেণিভুক্ত। পৃথিবীপৃষ্ঠে পাওয়া মোট উল্কার প্রায় ৮৬% এই দলের অন্তর্গত।
  2. আয়রন উল্কা (Iron meteorites): এরা প্রধানত লোহা-নিকেল ধাতু দিয়ে গঠিত। পৃথিবীপৃষ্ঠে পাওয়া মোট উল্কার প্রায় ৬% এই দলের অন্তর্গত।
  3. স্টোনি-আয়রন উল্কা (Stony-Iron meteorites): এরা লোহা-নিকেল ধাতু ও সিলিকেট খনিজের মিশ্রণ দ্বারা গঠিত। বাকি ৮% এই দলের অন্তর্গত।

চিত্র ৩। বিভিন্ন প্রকার উল্কা
উল্কা নিয়ে ক্রমাগত এবং উন্নত গবেষণা তাদের রাসায়নিক গঠন ও খনিজ উপাদানের উপস্থিতি সংক্রান্ত জ্ঞান আরও বিভিন্ন শ্রেণী এবং উপশ্রেণীতে তাদের ভাগ করেছে। বিশদ আলোচনা এই প্রবন্ধে করার অবকাশ নেই।
অধিকাংশ উল্কাই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের অব্যবহিত পরেই খণ্ড খণ্ড হয়ে ভেঙ্গে যায়। গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে ১০ গ্রাম-এর চেয়ে বড় ১৮০০০-৮৪০০০ উল্কা পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছায়, যার মধ্যে শুধুমাত্র বছরে পৌঁছায় মাত্র ৫ থেকে ৬ টুকরো। পৃথিবীপৃষ্ঠের কোন জায়গায় উল্কা পড়ল আর আবিষ্কৃত হল সেই অনুযায়ী হয় নামকরণ। আর যদি একাধিক উল্কা একই স্থানে পাওয়া যায়, তাহলে তাদের নামকরণ করা হয় ক্রমানুসারে। উল্কার আকার হতে পারে নানান রকম। এর ব্যাস কয়েক মিলিমিটার থেকে বেশ কয়েক মিটার পর্যন্ত হতে পারে। একটি বড় আকারের উল্কা পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর যখন পড়ে, তখন একটি বেশ বড়সড় জ্বালামুখ পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর তৈরি হয়। আজ যদি আমরা পিছন ফিরে তাকাই, তখন দেখতে পাই যে, অতীতে উল্কাপাতের সময় পৃথিবীপৃষ্ঠের সঙ্গে সঙ্ঘাতে অনেক জ্বালামুখ সৃষ্টি হয়েছে, যার সঙ্গে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঘটনাকেও কোন কোন ভাবে দায়ী বলে ভাবা হয়।
যদিও উল্কা পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর যেকোনও জায়গায় পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু FALL এবং FIND উভয় ধরনের উল্কার সংগ্রহ এন্টার্কটিকা মহাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। আর এরপর যে অঞ্চল থেকে এদের সংগ্রহ করা হয় তা হল মরুভূমি এলাকা। আর খুব সামান্য কিছু সংগৃহীত হয়েছে বাকি অন্য দেশ এবং সমুদ্র ও মহাসাগর সহ অন্যান্য মহাদেশ থেকে। এর অর্থ এই নয় যে শুধুমাত্র এন্টার্কটিকা বা মরুভূমি এলাকায় উল্কা প্রচুর সংখ্যক পড়ে, বরং বলা যায় এই উভয় এলাকার ভৌগলিক স্বভাব তাদের আবিষ্কারের জন্য সহায়ক হয়। এন্টার্কটিকার ভূপৃষ্ঠের ৯৮%-এরও বেশি তুষার ও বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত। বরফমুক্ত এলাকায় মোট আয়তন মাত্র ২% যার মধ্যে পড়ছে পাহাড়, নুনাটক (nunataks) এবং ওয়েসিস (Oases)। নুনাটক উন্মুক্ত, পাথুরে উপাদান-এর একটি সেতুবন্ধ, ন্যাড়া পাহাড় শিখর কিংবা একটি বিরাট বরফক্ষেত্র বা হিমবাহ। একে বরফতুল্য দ্বীপও বলা হয়। নুনাটক শব্দটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় যেখানে একটি স্থায়ী বরফাঞ্চলের উপস্থিতি রয়েছে। ওয়েসিস হল মরুভূমির মধ্যে একটি ছোট উর্বর ভূমি বা মরুদ্যান যেখানে সাধারণত একটি বসন্ত বিরাজ করে। পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর বৃহত্তম বরফ-আবৃত জায়গা হল এই এন্টার্কটিকা যে তার নিজের ওজন এবং মাধ্যাকর্ষণের কারণে সারা বছর ধরে উত্তরদিকে একটি নির্দিষ্ট বিচলন বেগে এগিয়ে আসছে। বিগত কয়েক লক্ষ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ও পুরু তুষার চাদর দ্বারা আবৃত এন্টার্কটিকার উপর উল্কা পতন হচ্ছে। যেখানে পর্বত ও নুনাটক রয়েছে সেখানে পোলার বরফ খণ্ডের একটানা গতি মন্দীভূত হয় কারন এরা বাধা হিসেবে কাজ করে। বরফ প্রবাহের এই ডিফারেনশিয়াল আন্দোলন নিচের দিকের তুষার বা বরফ স্তরকে হিমবাহ পৃষ্ঠতলে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে। দক্ষিণদিকের গ্রীষ্মকালে (নভেম্বর – মার্চ) বাতাসের উচ্চগতি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিমশৈলের উপরের অংশ গলতে থাকে, ফলে পুরু বরফের মধ্যে আটকে থাকা উল্কাপিণ্ডের জায়গা পরিবর্তিত হয়; পতনের জায়গা থেকে দূরে সরে যায় এবং হিমশৈলের প্রান্তভাগের কাছাকাছি ঘনীভূত হয়। নীলাভ বরফ এবং গাঢ় রঙের উল্কাপিণ্ডের মধ্যে রং-এর পার্থক্য থেকেই সহজে উল্কাপিণ্ড গুলিকে এই সম্ভাব্য অঞ্চলে চিহ্নিত করা যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অধ্যয়ন করেই, এন্টার্কটিকা থেকে অনেক উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা গেছে। মরুভূমি এলাকাতেও, ধূলি মলিন বালি এবং গাঢ় রঙের উল্কাপিণ্ডের মধ্যে রং-এর পার্থক্য থেকেই উল্কাপিণ্ড শনাক্ত করা যায়। অন্যান্য জাগতিক বস্তুর বিভিন্ন রং উল্কাপিণ্ডের গাঢ় রঙের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বলে অন্যান্য স্থানে এদের উপস্থিতি শনাক্ত করা এবং সংগ্রহ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আমাদের অনেক এগিয়ে নিয়ে গেলেও আমাদের নিজস্ব পৃথিবীর বাইরে সুবিশাল মহাজাগতিক স্থান সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত এবং সঠিক তথ্য আমরা এখনও বিশেষ জানি না। উল্কাপিণ্ড যেহেতু মহাজাগতিক স্থান থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তাই এর অধ্যয়নও গবেষণা মহাজাগতিক গঠন বা অন্যান্য অনেক গ্রহের উৎপত্তি সেইসাথে তাদের গঠন সম্পর্কে আমাদের বুঝতে সাহায্য করে। এখনও পর্যন্ত মানুষের পক্ষে স্বশরীরে অন্য কোনো গ্রহে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, কিন্তু সেই গ্রহ থেকেই উৎপন্ন উল্কা পৃথিবীতে এসে সেই গ্রহের গঠন এবং উৎপত্তি সম্বন্ধে আমাদের নানা সূত্র/ইঙ্গিত দিচ্ছে, আর তার ভিত্তিতেই হচ্ছে বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক তদন্ত। জীবনের উৎপত্তি এবং জীবনের অন্যতম উপাদান কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন – সেই সাথে তাদের সংযুক্তিকরণ ও বিয়োজন এই উল্কাপিণ্ড থেকে চর্চিত হয়। ভবিষ্যতে, উল্কাপিণ্ডের বিস্তারিত গবেষণা অন্যান্য গ্রহে ও মহাজাগতিক স্থানে জীবনের অস্তিত্ব জানার উপায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে ভাবা হচ্ছে।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (GSI) ভারতে পাওয়া সমস্ত উল্কাপিণ্ডের জিম্মাদার সংস্থা। GSI এগুলিকে সংগ্রহ করে এবং এই বিষয়ের সমস্ত তথ্য বজায় রাখে। ভারতের নানান প্রান্ত থেকে উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা হয়েছে এবং GSI-এর সদর দফতর কলকাতায় উল্কা জাদুঘরে রাখা আছে। ২০১২ সালে এন্টার্কটিকায় ৩২তম ভারতীয় বৈজ্ঞানিক অভিযান চলাকালে একটি উল্কা গবেষণা কর্মসূচি শুরু হয়। ফিজিকাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (PRL), আহমেদাবাদ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিও পদার্থ বিজ্ঞান-এর একটি গবেষক দল উল্কাপিণ্ড নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছেন।
অবশেষে এটা বলা যেতে পারে যে, উল্কাপিণ্ড-গবেষণা গ্রহ এবং অন্য মহাজাগতিক বস্তুর উৎপত্তি ও বিবর্তন বুঝতে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। নিঃসন্দেহে, মহাবিশ্বের যেসকল তথ্য এখনও পর্যন্ত উন্মোচিত করা সম্ভব হয়নি তা এই গবেষণা থেকে পাওয়া যেতে পারে। সুতরাং, উল্কাপিণ্ডের বৈজ্ঞানিক সংগ্রহ এবং এর গবেষণায় উৎসাহ ও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

স্টিফেন হকিং এর জীবন যাত্রা

Detail
তিনি একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, মহাবিশ্ববিদ, লেখক, বিজ্ঞান জনপ্রিয়কারী, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক মহাকাশবিদ্যা বিভাগের পরিচালক, এবং প্রফেসর। পড়াশোনা করেছে, কিন্তু তার নাম জানে না, এমন মানুষ মনে হয় গোটা দুনিয়াতে একজনও পাওয়া যাবে না। বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা মেধাবী এই মানুষটার নাম স্টিফেন উইলিয়াম হকিং। জীবনের বেশির ভাগ সময় মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে কাটিয়েছেন, তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছেন। তারপরেও তার অর্জনের খাতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মহিমান্বিত। আসুন, আজ আমরা এই অসামান্য মেধাবী লোকটার জীবনের গল্প শুনি।

জন্ম ও শৈশব

তার বাবা-মা দুজনেই অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করতেন, কিন্তু তখন তাদের দেখা হয়নি। আমরা অনেক সময় যুদ্ধকালীন সময়ের রোমান্সের গল্প পড়ি। তাদের গল্পটা বুঝি অনেকটা সেরকমই। পড়াশোনা শেষ করার পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার কিছু সময় পর লন্ডনে তাদের দেখা হয়েছিলো। চারিদিকে জার্মান বোমা পড়ছে, এমন একটা সময়ে মা ইসোবেলের গর্ভে এলেন স্টিফেন হকিং। তার জন্ম হয়েছিলো অক্সফোর্ডেই, ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি। জন্মের আগেই গর্ভবতী মা লন্ডন ছেড়ে অক্সফোর্ডে চলে এসেছিলেন, কারণ লন্ডনে তখন প্রায়ই সাইরেন বাজে; “বোমারু বিমান আসছে”- সেই সাইরেন।
মেধাবী পরিবারেই জন্ম হয়েছিলো তার, এবং মা-বাবা ছেলেমেয়ের পড়াশোনার দিকে বেশ মনযোগও দিয়েছিলেন। প্রাইমারি স্কুলে অনেকদিন পার করার পরেও হকিং পড়তে পারতেন না, এজন্য তিনি স্কুলকেই দোষ দিয়েছেন। অবশ্য সেটা কেটে গিয়েছিলো কয়েক বছরের মধ্যেই, ইন্টারমিডিয়েটও পাশ করে ফেলেছিলেন অন্যদের চেয়ে এক বছর আগেই, প্রধান শিক্ষকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে।

তার আগে অবশ্য আসে হাই স্কুল (শুরু হয় ক্লাস নাইন থেকে, টুয়েলভে গিয়ে শেষ হয়)। বাবা চেয়েছিলেন নামকরা ওয়েস্টমিনস্টার স্কুলে পড়াতে, কিন্তু বিধি বাম! স্কলারশিপের জন্য একটা পরীক্ষা দিতে হয়, আর সেই পরীক্ষার দিন হকিং অসুস্থ হয়ে পড়লেন, পরীক্ষা আর দেয়া হলো না। আর এত টাকা খরচ করে সেখানে পড়ানোর মত অবস্থাও বাসায় ছিলো না। তাই আগের স্কুল সেইন্ট আলবানস-ই সই! সেখান থেকেই ইন্টার পাশ করেছিলেন তিনি। ও হ্যাঁ, আরেকটা জিনিস, স্কুলে অনেকেই তাকে “আইনস্টাইন” বলে ডাকতো। এতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে, বলুন!

অক্সফোর্ডে পড়াশোনা

১৯৫৯ সাল। হকিং এর বয়স ১৭।
আগেই বলেছি, তার বাবা-মা অক্সফোর্ডে পড়েছিলেন। ইউরোপ-আমেরিকাতে একটা জিনিস খুব বেশি চলে। বাবা-মা চায়, তাদের সন্তান তাদেরই ইউনিভার্সিটিতে পড়ুক; তারা যে হাউজে থাকতেন, সেই হাউজেরই সদস্য হোক। নিজ নিজ হাউজের জন্য অনেকে অনেক অনুদানও দেয়।
বাবা চাইলেন, “তুমি আমার ছেলে, তুমি আমার মত ডাক্তারি পড়বে”।
ছেলে বললো, “গণিত পড়বো”।
বাবা বললেন, “গণিত পড়লে খাবে কী? তাছাড়া তুমি অক্সফোর্ডে পড়বে, এটা নিয়ে কোনো ওজর আপত্তি শোনা হবে না। অক্সফোর্ডে গণিত বলে কোনো বিষয় নাই”। হুম, ঐ আমলে অক্সফোর্ডে ম্যাথামেটিক্স ছিলো না।
ছেলে বললো, “আচ্ছা, অক্সফোর্ডে পড়বো, কিন্তু ডাক্তারি পড়বো না। ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি পড়বো। এটা নিয়ে কোনো ওজর আপত্তি শোনা হবে না।” —- এগুলো সম্পূর্ণ আমার মস্তিষ্কপ্রসূত কাল্পনিক ডায়লগ, কিন্তু কাহিনী সত্য!
যাই হোক, তরুণ হকিং সাহেব “আইনস্টাইন” ডাকনামটার নামকরণের সার্থকতা যাচাই করে যাচ্ছিলেন অক্সফোর্ডে এসেও। পড়াশোনা নাকি পানিভাত ছিলো তার কাছে। তাকে পদার্থবিজ্ঞানে একাডেমিক কোনো সমস্যা দিলেই সমাধান হাজির- এটা তার তৎকালীন প্রফেসর রবার্ট বারম্যানের মন্তব্য। এজন্য পড়াশোনার দিকে তার ধ্যান ছিলো খুবই কম। অনার্স জীবনের তৃতীয় বছরে পড়াশোনা বলতে প্রায় বাদ দিয়ে টোঁটো করে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন, বন্ধু বান্ধব বানানোর দিকে মনযোগ দিলেন। চতুর্থ বছরে, ফাইন্যাল পরীক্ষার ফলাফল এমন হলো যে ফার্স্ট ক্লাস নাকি সেকেন্ড ক্লাস- সেটা নির্ধারণের জন্য ভাইভা প্রয়োজন হলো। অমনযোগী ছাত্র হিসেবে ততদিনে তিনি বেশ সুনাম(!) কামিয়েছেন। ভাইভাতে গিয়ে তিনি সেটার সুযোগ নিলেন। ভবিষ্যত পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করার পর তিনি যা বলেছিলেন, সেটা সরাসরি অনুবাদ করে তুলে দিচ্ছি, “যদি আমাকে ফার্স্ট ক্লাস দেন, তাহলে কেম্ব্রিজে চলে যাবো, ওখানে গিয়ে মহাবিশ্বতত্ত্ব পড়বো। যদি সেকেন্ড ক্লাস দেন, তাহলে অক্সফোর্ডেই থাকবো। মনে হয়, ফার্স্ট ক্লাস দিয়ে বিদেয় করে দিলেই ভালো হবে”।
তিনি ভাইভা বোর্ডের শ্রদ্ধা অর্জন করলেন, ফার্স্ট ক্লাস পেলেন, ইরান থেকে ঘুরে এলেন, শুরু করলেন কেম্ব্রিজের পিএইচডি জীবন।

কেম্ব্রিজে পিএইচডির দিনগুলি

বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েল তখন কেম্ব্রিজে পড়াচ্ছেন। হকিং চেয়েছিলেন, তার সাথে কাজ করতে। কিন্তু তাকে সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়া গেলো না। হয়েল অনেক ব্যস্ত ছিলেন, এটা একটা কারণ হতে পারে। যারা হয়েলকে চেনেন না, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি – আমরা এখন জানি যে, আমরা সবাই নক্ষত্রের সন্তান। আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অণু পরমাণু কোনো একটা নক্ষত্রের হৃদয়ে তৈরি হয়েছে। কার্ল সেগান এই ধারণাটাকে সবার মধ্যে জনপ্রিয় করে দিয়েছিলেন “we are star stuff” উক্তি দিয়ে। কিন্তু সেই একাডেমিক গবেষণা করেছিলেন ফ্রেড হয়েল এবং তার সহযোগী গবেষকরা (মার্গারেট বারবিজ, জেফ্রি বারবিজ, আর উইলিয়াম ফাওলার)। B2FH paper লিখে গুগল করলেই আর্টিকেলটা পেয়ে যাবেন। এমন একটা গবেষকের সাথে কাজ করতে না পেরে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিলো তার। তবে, তিনি যাকে পেয়েছিলেন, সেটা হকিং এর জন্য শাপে বর হবে একদিন। তার সুপারভাইজার ছিলো ডেনিস সিয়ামা, আধুনিক মহাবিশ্বতত্ত্বের জনকদের একজন। তার সাথে কাজ করতে গিয়ে, প্রথমদিকে নিজের গণিতজ্ঞান নিয়েও ঠোকর খাচ্ছিলেন হকিং। আগেই বলেছি, তিনি অক্সফোর্ডে ছিলেন, আর সেখানে গণিতের জন্য উৎসর্গীকৃত বিভাগও ছিলো না তখন। তবু সাধারণ আপেক্ষিকতা আর মহাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে কাজ শিখে নিতে লাগলেন তিনি। ডেনিসও খুব ধৈর্য নিয়ে তার সাথে আলোচনা করতেন।
এমন সময় তার বোনের একটা বন্ধু জেইন ওয়াইল্ডের সাথে দেখা হলো তার। ফরাসি সাহিত্যে পড়ুয়া এই মেয়েটার সাথে খুব দ্রুত তার সখ্যতা গড়ে উঠলো এবং সেটা প্রেমেও গড়ালো। এই মেয়েটা না থাকলে হকিং হয়তো হকিং হয়ে উঠতেন না; কারণটা আমরা কিছুক্ষণ পরেই দেখবো।

মোটর নিউরন রোগ বা ALS

পেশী নাড়ানো যায় না, আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হতে থাকে, শারীরিকভাবে অথর্ব হয়ে পড়ে রোগী, কথা বলা অসম্ভব হয়ে যায়, খাবার গেলা যায় না, আস্তে আস্তে নিঃশ্বাসও আটকে যেতে থাকে – কারণ এই রোগে পেশী নাড়ানোর জন্য যে নিউরনগুলো দায়ী, সেগুলোর মৃত্যু ঘটতে থাকে আস্তে আস্তে। রোগের নাম মোটর নিউরন রোগ বা Amyotrophic lateral sclerosis (ALS). এই রোগে আক্রান্ত রোগী মারা পড়ে কয়েক বছরের মধ্যেই। আর সেই রোগে স্টিফেন হকিং আক্রান্ত হলেন মাত্র ২১ বছর বয়সে, ১৯৬৩ সালে। ডাক্তাররা বললো, হাতে আর দু বছরের মত সময় আছে। কোনো কোনো ডাক্তার বললো, ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচবেন না হকিং।
এটা জানার পর মানসিকভাবেও ভেঙে পড়লেন তিনি, পড়াশোনা ছেড়ে দিতে চাইলেন। ডাক্তাররা বললো, “ব্যস্ত থাকো, কিছু একটা নিয়ে লেগে থাকো। পড়াশোনাটা ছেড়ো না”। তার সুপারভাইজার ডেনিস সিয়ামাও বললেন, “এসো, আমি জানি, তুমি পারবে”। সবচেয়ে বড় খুঁটি হয়ে পাশে দাঁড়ালো সদ্য প্রেমিকা জেইন ওয়াইল্ড। বললো, “চলো, আমরা বিয়ে করে ফেলি”।
হকিং সেই সময়ের কথা রোমন্থন করে বলেছিলেন, “আমাদের বাগদান (এঙ্গেইজমেন্ট) আমাকে বেঁচে থাকার রসদ যুগিয়েছিলো”। ১৯৬৫ সালে দুজন বিয়েও করে ফেললেন।



মহাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা


ঠিকমত কলমটাও ধরতে পারতেন না তিনি, যখন আবার গবেষণায় ফিরেছিলেন। তখনো তার ডক্টরাল থিসিসের বিষয় ঠিক হয়নি। তখন তিনি একটা বিষয়ে আগ্রহ খুঁজে পেলেন। রজার পেনরোজ তখন বেশ বিখ্যাত গবেষক ছিলেন। কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তিনি চমৎকার কিছু কাজ করেছিলেন। বলেছিলেন, কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে নাকি স্থান-কালের অনন্যতা আছে। সহজ ভাষায়, এটার কেন্দ্রে গিয়ে স্থান আর কাল এমনভাবে অবস্থান করে যেন এটা অসীম, কিন্তু অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা জায়গায়। অর্থাৎ, সেখানে সময় যেন থেমে আছে মহাকর্ষের টানে, আর একই টানে স্থানও বেঁকে গিয়ে ক্ষুদ্র হয়ে গেছে ধারণার অতীত একটা অবস্থানে। হকিং ভাবলেন, একই কাহিনী যদি গোটা মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়, তাহলে কেমন হয়?
জর্জ লেমিত্রে আর এডুইন হাবলের কল্যাণে বৃহৎ বিস্ফোরণ তত্ত্ব ততদিনে অনেক জনপ্রিয়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জনপ্রিয়তার কথা না হয় আর নাই বললাম। এগুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে তিনি তার থিসিস লেখা শুরু করলেন ১৯৬৫ সালে, Properties of extending universe অথবা “প্রসারণশীল মহাবিশ্বের বৈশিষ্ট্যগুলো”। ১৯৬৬ সালে সেটাকে অনুমোদন দেয়া হলো। পেনরোজ স্বয়ং তার থিসিস কমিটিতে ছিলেন। আমার মনে হয় না, ডেনিস তার পাশে খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে না থাকলে এত কিছু সম্ভব হতো। পিএইচডি জীবনে সুপারভাইজারই সবচেয়ে বড় কথা। ঐ অবস্থায় সুপারভাইজার যদি বলতেন, “আমি কোনো সাহায্য করতে পারবো না”, তাহলে সেই থিসিস কখনো আলোর মুখ দেখতো না।
সেই সময়টাতে চলাচলের জন্য হুইলচেয়ার ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না তার। বাকি জীবনটা হুইলচেয়ারেই কাটাতে হবে তাকে।

কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা + হকিং বিকিরণ + কৃষ্ণগহ্বর তথ্য বৈপরীত্য

পিএইচডি শেষে তিনি কেম্ব্রিজে পেনরোজের সাথেই কাজ শুরু করলেন। ১৯৭০ সালে পেনরোজ এবং তিনি মিলে প্রমাণ করে দেখালেন যে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড কোনো এক অনন্যতা থেকেই শুরু হয়েছে। একই বছরে তিনি কৃষ্ণগহ্বর নিয়েও আরো বিস্তৃত কাজ শুরু করলেন। তিনি প্রস্তাব করলেন যে, কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন (যেখানে ঢুকে গেলে আর মুক্তি নেই, গহ্বর আপনাকে শুষে নেবেই, সেটা) সময়ের সাথে ছোটো হয় না। অন্য গবেষকদের সাথে মিলে কৃষ্ণগহ্বরের ক্রিয়াকৌশল নিয়ে চারটা নীতি উত্থাপন করলেন ১৯৭০ সালে। ঘটনা দিগন্ত ছোটো না হওয়ার বৈশিষ্ট্যটা রাখলেন দ্বিতীয়তে। ১৯৭৩ সালে জর্জ এলিসের সাথে যুগ্মলেখক হিসেবে তিনি প্রথম বই প্রকাশ করলেন। নাম – The Large Scale Structure of Space-Time.
একই বছরে তিনি মহাবিরক্ত হয়ে খেয়াল করলেন যে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তার দেয়া দ্বিতীয় নীতিটা ভুল। কারণ কিছু রাশিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছিলো যে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে ঘূর্ণনরত কৃষ্ণগহ্বর থেকে কণা নির্গত হবার কথা। হকিং গবেষণা করে দেখালেন যে, কাহিনী সত্য। ১৯৭৪ সালে তিনি বললেন, “কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরণ হয়, এবং এটা ততদিন চলবে, যতদিন এটার শক্তি শেষ না হয়, যতদিন এটা বিকিরণ করতে করতে উবে না যায়।” এই বিকিরণকে এখন হকিং বিকিরণ বা Hawking Radiation বলা হয়।
১৯৮১ সালে তিনি প্রস্তাব করেন যে, বিকিরণ করতে করতে যখন কৃষ্ণগহ্বর উবে যায়, তখন এর ভেতরের তথ্যগুলোও হারিয়ে যায়। কিন্তু তথ্য তো কখনো হারিয়ে যায় না। তাই, এটা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান জগতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া (পড়ুন, যুক্তিপূর্ণ আলোচনা-সমালোচনা) শুরু হয়ে যায়। তথ্যসংক্রান্ত এই বৈপরীত্যের নাম Blackhole Information Paradox.

বাকশক্তি হারিয়ে ফেলা

১৯৮৫ সাল। হকিং তখন সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে, CERN এ গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। ভয়াবহ শারীরিক অবস্থা হয়েছিলো তার। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিলো। যেহেতু রোগী কোমায় এবং তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ, তাই ডাক্তাররা তার স্ত্রী জেইনকে জিজ্ঞেস করলো, লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হবে কিনা। এই নারীর প্রচণ্ড মনোবলে হকিং সেই যাত্রায় বেঁচে ফিরে এসেছিলেন। জেইন হকিংকে কেম্ব্রিজে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তার সংক্রমণ ঠেকানো হয়। কিন্তু তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। তাই, হকিং এর শ্বাসনালী কেটে সেখানে টিউব বসানো হয়। ALS এর জন্য আগে এমনিতেই তার কথা জড়িয়ে যেতো, এবার তিনি সম্পূর্ণরুপে বাকশক্তি হারালেন।
প্রথমে কিছুদিন তিনি বানান কার্ড ব্যবহার করে যোগাযোগ করতেন। তাকে একটা একটা অক্ষর দেখানো হতো, তিনি যেটা বলতে চাইতেন, সেটাতে এসে থামলে ভ্রু উঁচু করতেন। পরবর্তীতে হকিং এর এক সহযোগী পদার্থবিদ ক্যালিফোর্নিয়ার একটা কোম্পানি Words Plus এ যোগাযোগ করলেন। এই কোম্পানি কম্পিউটার আর হাতের মধ্যে রাখা ক্লিকার ব্যবহার করে শব্দ আর বাক্য বানানোর মত সফটওয়্যার প্রযুক্তি বানিয়েছিলো। সেখানকার সিইও ওয়াল্টার ওয়োল্টজকে মার্টিন কিং বললেন, “এটা দিয়ে কি ALS এ আক্রান্ত ইংরেজ এক প্রফেসরকে সাহায্য করা যাবে?”
ওয়াল্টার সাহেব সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি স্টিফেন হকিং এর কথা বলছেন?”
কিং বললেন, “অনুমতি ছাড়া তার নামটা বলা যাবে না”।
পরের দিন অবশ্য তিনি ওয়াল্টারকে নিশ্চিত করেছিলেন যে এটা হকিং এর জন্যেই। ওয়াল্টার ALS এ আক্রান্ত শ্বাশুড়ির জন্য এটা বানিয়েছিলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন, “যা যা দরকার, সবই পাঠিয়ে দেবো।”
এই সফটওয়্যারটাকে একটা ভয়েস সিনথেসাইজারের সাথে যুক্ত করে দিয়েছিলো Speech Plus নামের একটা কোম্পানি। এরপর থেকে মিনিটে পনেরোটার মত শব্দ বলতে পারতেন তিনি।

“কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” প্রকাশ

১৯৮২ সাল, ততদিনে হকিং এর তিন সন্তান খানিকটা বড় হয়ে গেছে। টাকাপয়সার কিছুটা টানাটানি শুরু হয়েছিলো। তিনি ঠিক করলেন, সর্বসাধারণের জন্য সাধারণ ভাষায় একটা বই লিখবেন। বইটার প্রথম খসড়া প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলো ১৯৮৪ সালেই, বাকশক্তি হারানোর এক বছর আগে। কিন্তু তার প্রকাশকের কাছে বইটা কঠিন মনে হওয়ায় (মানুষ বুঝবে না মনে হওয়ায়) আরো সহজ ভাষা ব্যবহার করতে বলেছিলেন।

সিনথেসাইজার দিয়ে কথা বলতে পারার সাথে সাথেই তিনি সেই কাজটা শুরু করলেন। তিনি যতই সহজ করেন, প্রকাশক সন্তুষ্ট হন না। দিন যায়, প্রকাশক বলতে থাকে, “এই জায়গাটা আরেকটু সহজ করো”। হকিং এর জন্য একই জিনিস বারবার দেখা আর লেখাটা খুবই কষ্টের হয়ে উঠছিলো। ব্যাপারটাকে তিনি সময়ের অপচয় বলে মনে করতেন। কিন্তু প্রকাশক পেছনে পড়েছিলো। অবশেষে ১৯৮৮ সালে বইটা প্রকাশিত হলো, প্রথম সংস্করণে ভূমিকা লিখে দিলেন খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সেগান। বইটা ধুম মাচিয়ে দিলো সাথে সাথেই। এতদিনে প্রায় কোটির ওপরে কপি বিক্রি হয়ে গেছে।

ডিভোর্স, বিয়ে, এবং ডিভোর্স

বলতে গেলে ঐ সময়েই তিনি রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে যান। আর হ্যাঁ, টাকাপয়সার সমস্যা আর কোনোদিন দেখতে হয়নি তাকে বা তার পরিবারকে। তবে ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। দাম্পত্য জীবনে বেশ অসুখী ছিলেন তিনি। তাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিলো ঠিকই, কিন্তু একসাথে থাকা আর সম্ভব হচ্ছিলো না।
১৯৯০ সালে, হকিং তার এক নার্সের সাথে থাকা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে জেইনের সাথে তার ডিভোর্স হয়ে যায়। আর সেই নার্সকে বিয়ে করেন হকিং। ২০০৬ সালের দিকে সেই সম্পর্কেরও ইতি টানেন তিনি। জেইনের সাথে পুনরায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জেইন আগে একটা বই লিখেছিলেন, Music to Move the Stars. ২০০৭ সালে সেটার একটা পরিমার্জিত রুপ বের করেন, Travelling to Infinity: My Life with Stephen.

স্বাস্থ্যের অবনতি

আস্তে আস্তে যে আঙুল দিয়ে ক্লিকার ব্যবহার করতেন, সেটাও অসাড় হয়ে যেতে লাগলো। ২০০৮ সালের দিকে, তার গ্র্যাজুয়েট এসিস্ট্যান্ট চশমায় ইনফ্রারেড লাগিয়ে গালের পেশীর নড়াচড়া দিয়ে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করলো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটাও দুর্বল হয়ে যেতে লাগলো। ২০১১ এর দিকে, মিনিটে ১৫টার জায়গায় ২টা শব্দে এসে ঠেকলো তার যোগাযোগের গতি। তিনি ইন্টেলকে চিঠি লিখলেন, ওরা কোনো সাহায্য করতে পারবে কিনা জানতে চেয়ে। ইন্টেল একটা টিম পাঠালো, যাতে কম্পিউটার-হিউম্যান ইন্টারএকশন ডিজাইনার ছিলেন পিট ডেনম্যান। কাহিনীটা অদ্ভুত!
পিট ডেনম্যান নিজেও হুইলচেয়ার ব্যবহার করতেন। ঘাড় ভেঙে যাওয়ার পর যখন তাকে হুইলচেয়ারে আটকে পড়তে হয়েছিলো, তখন তার মা তাকে “কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” বইটা দিয়ে বলেছিলেন, “হুইলচেয়ারে বসেও মানুষ চমৎকার সব কাজ করতে পারে”। স্টিফেন হকিং ছিলেন পিট ডেনম্যানের প্রেরণা; আর তার প্রেরণার মানুষটা তাদের সাথে ৩০টা শব্দ বলতে ২০ মিনিট নিয়েছিলেন।

অনেক সাধনার পরে তারা এমন এক ব্যবস্থা করলেন যাতে তাকে কোনো শব্দ টাইপ না করতে হয়, বরং তিনি যাতে দেখানো শব্দগুলো থেকে দ্রত বাছাই করতে পারেন, তার গালের পেশী দিয়েই। বারবার তারা সেটার ইন্টারফেস পাল্টেছেন, যাতে তিনি অপেক্ষাকৃত দ্রুত শব্দ বাছাই করতে পারেন।

নিকটতম নক্ষত্রে মহাকাশযান পাঠানোর প্রজেক্ট

রাশিয়ান পদার্থবিদ+ব্যবসায়ী ইউরি মিলনার আর জুলিয়া মিলনার মিলে মহাকাশ গবেষণা ব্রেকথ্রু ইনিশিয়েটিভ নামক একটি সংস্থা স্থাপন করেছিলেন ২০১৫ সালে। এই প্রকল্পের একটা অংশ হচ্ছে নিকটতম নক্ষত্রে মহাকাশযান পাঠানোর জন্য। নিউ ইয়র্কের ওয়ান ওয়ার্ল্ড পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জ্যোতিঃপদার্থবিদ স্টিফেন হকিং আর ইউরি মিলনার ২০১৬ সালের এপ্রিলের ১২ তারিখে ব্রেকথ্রু স্টারশটের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মার্ক জুকারবার্গও তাদের এই প্রচেষ্টার, অর্থাৎ Breakthrough Starshot এর বোর্ডে যুক্ত হয়ে সমর্থন জানিয়েছেন। এই প্রকল্পের অধীনে খুব কম ওজনবিশিষ্ট একটা মহাকাশযান তৈরি করা হবে। এর ওজন হতে পারে এক গ্রাম। আর এটার সাথে লাগানো থাকবে lightsail. Lightsail হচ্ছে এমন একটা পাল যেটা আলোর ধাক্কায় চলে। আলোকপাল নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম যখন প্ল্যানেটারি সোসাইটি মহাকাশে সফলতার সাথে (২০১৫ সালে) তাদের প্রথম লাইটসেইল পাঠিয়েছিলো।

স্টিফেন হকিং এর ধর্মবিশ্বাস

আইনস্টাইনের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে অনেকে টানাহ্যাঁচড়া করে। আইনস্টাইন প্রচলিত কোনো ধর্মের ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেও বারংবার মহাবিশ্বের ঐকতানকে ঈশ্বরের নাম দিয়ে উক্তি দিয়েছেন। হকিং এর ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টানাটানি করার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য সেটা সাম্প্রতিক সময়ে। একসময় তিনিও উদাহরণ দিতে গিয়ে ঈশ্বর শব্দটা ব্যবহার করেছেন। কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে তিনি লিখেছেন, “যদি কোনোদিন আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব আবিষ্কার করতে পারি, সেটা হবে মানুষের যুক্তিক্ষমতার সর্বোচ্চ বিজয়- আর সেদিন আমরা ঈশ্বরের মন বুঝতে পারবো”। কেউ টানাটানি করতে চাইলে এই লাইনটা নিয়ে করতে পারে; যদিও একই বইতে তিনি লিখে দিয়েছিলেন, “মহাবিশ্বের উৎপত্তি বর্ণনা করার জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রয়োজন নেই”। ২০১৪ সালে এটাকে আরো খোলাসা করে বলেছেন, “ঈশ্বরের মন বুঝতে পারা বলতে আমি বুঝিয়েছি, যদি কোনো ঈশ্বর থেকে থাকে–যা আসলে নেই–তাহলে সেই ঈশ্বরের যা যা জানার কথা, আমরা তাই জানবো। আমি নাস্তিক”।
হকিং এও বলেছেন, “ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। ধর্মের ভিত্তি কর্তৃত্ব ফলানোতে, আর বিজ্ঞানের ভিত্তি পর্যবেক্ষণ আর যুক্তিতে। জয় হবে বিজ্ঞানেরই, কারণ এটা কার্যকর”। স্বর্গ বা পরকালকে তিনি রুপকথার গল্প বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের জীবন একটাই। এই এক জীবনেই ব্রহ্মাণ্ডের মহান নকশার কদর করতে হবে। আর সেই জীবন পেয়েছি বলে আমি কৃতজ্ঞ।”

তাকে নিয়ে বানানো মুভি, Theory of Everything

হকিং এর প্রথম স্ত্রীর লেখা বই Travelling to Infinity: My Life with Stephen এর কথা উল্লেখ করেছিলাম একটু আগে। সেটা দিয়ে একটা সিনেমা বানানো হয়েছিলো ২০১৪ সালে, Theory of everything. স্টিফেন সেই সিনেমাটা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। হকিং এর ভূমিকায় এডি রেডমেইনকে দেখে তিনি মনে করেছিলেন যে তিনি যেন নিজেকেই দেখতে পাচ্ছেন।

সিনেমাটা আসলেই চমৎকার! আর এডি রেডমেইন একটা অস্কারও জিতে নিয়েছেন হকিং এর ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য।

মৃত্যু

তিনি জন্মেছিলেন গ্যালিলিওর মৃত্যুবার্ষিকীতে। আর মৃত্যুবরণ করলেন আইনস্টাইনের জন্মবার্ষিকীতে। ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ, স্টিফেন হকিং ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজে মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যুর আগে কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করতো, “এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী মানুষটা কে?” – তাহলে সহজেই উত্তর দিতে পারতাম। কিন্তু এখন আর পারছি না। তার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সাথে সাথে চোখ ঘোলা হয়ে গিয়েছিলো। তার স্মৃতিতে লিখেছিলাম –
প্রিয় স্টিফেন হকিং,
আমি আইনস্টাইনের সময়ে এই পৃথিবীতে ছিলাম না। যতদিন কার্ল সেগান বেঁচে ছিলেন, ততদিন ওনাকেও চিনতাম না। ফাইনম্যানের সময়েও না, নিউটনের সময়েও না। আমি এই পৃথিবীটা সজ্ঞানে ভাগাভাগি করেছি আপনার সাথে। আপনি আমাদের সময়ের সবচেয়ে মেধাবী পদার্থবিদ ছিলেন। সারাজীবন ব্যাপক পরিশ্রম করে আজ আপনি চিরবিদায় নিলেন।
আপনার এতদিন বেঁচে থাকার কথা ছিলো না। ডাক্তাররা দু বছরের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সেই কত বছর আগে। মোটর নিউরন ডিজিজ এর শিকার হয়ে হুইলচেয়ারে আটকে পড়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকেই পুরো দুনিয়াটাকে জয় করে নিয়েছিলেন আপনি। Even from a wheelchair, you achieved a lot, more than a lot of us combined.
হকিং সাহেব, আপনার জীবন এবং কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। Thank you for coming and living into this world.
সূত্র: বিজ্ঞান যাত্রা

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

Detail

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাঙ্গালী জাতির এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। এর ২১৪ বছর পর পলাশির আম্রকাননের অদূরে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার প্রধানদের শপথের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল। শপথের সেই ৪১ বছরেরও মুজিবনগর দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজও মেলেনি।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমদ ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারত গমনের সময় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল রনাঙ্গণের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই এলাকার নিরাপত্তা ও ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর ১৪ এপ্রিল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন। প্রথম দিকে চুয়াডাঙ্গাতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ায় কথা থাকলেও যুদ্ধ পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তনের ফলে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শপথ গ্রহণের স্থান চুয়াডাঙ্গার পরিবর্তে ইপিআর-উইং-এর অধিন মেহেরপুর সীমান্ত এলাকা বৈদ্যনাথতলা মনোনিত করা হয়।

দিনের পর দিন মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ যুদ্ধের পরেও স্বীকৃতি না পেয়ে যখন তাদের মনোবল ভাঙ্গতে শুরু করে ঠিক এমনই এক সংকটকালীন সময়ে ভারতীয় বিএসএফ’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তা গোলক মজুমদার ও ৭৬ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল চক্রবর্তী বৈদ্যনাথতলায় এসে স্থানীয় সংগ্রাম কমিটি এবং মেহেরপুরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিক-ই-এলাহী সহ আওয়ামী নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে বৈদ্যনাথ তলায় (বর্তমানে মুজিবনগর স্মৃতি সৌধ) জায়গা দেখিয়ে মঞ্চ তৈরীর প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলেন।
আপামর জনতা স্বতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহনের মাধ্যমে ১৬ এপ্রিল সকাল থেকে সারারাত ধরে মঞ্চ তৈরী, বাঁশের বাতা দিয়ে বেস্টনি নির্মান এবং স্থানীয়ভাবে ভাঙ্গা চেয়ার টেবিল দিয়েই আয়োজন সম্পন্ন করেন। আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম আসে ভারতের হৃদয়পুর বিএসএফ ক্যাম্প থেকে। অত্যন্ত গোপনিয়তার সাথে আয়োজন সম্পন্ন করা হয়।

১৭ এপ্রিল ১৯৭১, সেই মাহিন্দ্রক্ষণে তাজ উদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে সকাল নয়টার দিকে বৈদ্যনাথ তলায় পৌছান। ইতিমধ্যে দেশী বিদেশী শতাধিক সাংবাদিক এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও আসেন। তার মধ্যে ছিলেন বিট্রিষ সাংবাদিক মার্ক টালি ও পিটার হেস। বহু প্রতিক্ষিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল এগারটায়।
মেজর আবু উসমান চৌধুরীর পৌছাতে বিলম্ব হওয়ায় ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ ইপিআর আনছারের একটি ছোট্র দল নিয়ে নেতৃবৃন্দকে অভিবাদন জানান। অভিবাদন গ্রহণের পর স্থানীয় শিল্পিদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সৈদয় নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। গৌরিনগরের বাকের আলীর কোরআন তেলওয়াত এবং ভবরপাড়া গ্রামের পিন্টু বিশ্বাসের বাইবেল পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এরপরে আওয়ামীলীগের চিফ হুইফ অধ্যাপক শেখ মোঃ ইউসুফ আলী বাংলার মুক্ত মাটিতে স্বাধীনতাকামী কয়েক হাজার জনতা এবং শতাধিক দেশী বিদেশী সাংবাদিকের সামনে দাঁড়িয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র পাঠ করেন।
ঐতিহাসিক সেই স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চিফ হুইফ অধ্যাপক ইউসুফ আলী রাষ্ট্র প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এরপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজ উদ্দীন আহমেদের নাম ঘোষনা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য আইন, সংসদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমদ, স্বরাষ্ট মন্ত্রী হিসেবে এএইচএম কামরুজ্জামান এবং অর্থ মন্ত্রী হিসেবে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং শপথ পাঠ করান। এ অনুষ্ঠানে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত না থাকলেও বারবার উচ্চাররিত হয় তার নাম।
মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্ণেল এম এ জি ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ পদে কর্ণেল আব্দুর রবের নাম ঘোষনা করা হয়। এরপরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমেদ উপস্থিত সকলের সামনে ৩০ মিনিটের এক উদ্দিপনাময় ভাষন দেন। ভাষনে তিনি বলেন আজ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হবে এ বৈদ্যনাথতলা। এবং এর নতুন নাম হবে মুজিবনগর। তিনি ভাষনে বিশ্ববাসীর কাছে নতুন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দান ও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানান।
বক্তৃত্বা এবং শপথ গ্রহণ পর্ব শেষে নেতৃবৃন্দ মঞ্চ থেকে নেমে এলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন মেজর আবু উসমান চৌধুরী। উপস্থিত জনতার মূহু মূহু জয়বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মুজিবনগরের আম্রকানন। সব মিলিয়ে ঘন্টা দু’য়েকের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই টানা নয়মাস যুদ্ধ শেষে লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম  বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সহ অনেকেই মুজিবনগর সরকারকে এদেশের মাদার সরকার বলে আখ্যায়িত করেছেন।



2018

 
Support : | RSTSBD | RSTSBD
Copyright © 2017. রূপকল্প ২০৪১ - All Rights Reserved
This Blog Published by RSTSBD
Created by Uno Badalgachi