করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। February 2018 - রূপকল্প ২০৪১

আইসিটি বিষয়ের ব্যবহারিক থাকা জরুরি

Detail

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম চালু  হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা হবে ১২০০ নম্বরের পরিবর্তে ১৩০০ নম্বরের ভিত্তিতে। শিক্ষাক্রমে ২০০ নম্বরের ঐচ্ছিক কম্পিউটার শিক্ষার পরিবর্তে ১০০ নম্বরের আবশ্যিক ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ (আইসিটি) বিষয় সংযোজিত হয়েছে, যা ছয়টি শাখার শিক্ষার্থীদের জন্যই আবশ্যিক। সরকারের এ উদ্যোগ অত্যন্ত  সময়োপযোগী বলে মন্তব্য  করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশেষজ্ঞ। বিশেষ করে সবার জন্য তথ্য ও  যোগাযোগ প্রযুক্তি আবশ্যিক করায় শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাবলম্বী হবে।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ  মোকাবিলায় আইসিটি পৃথিবীর দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্যে খুলে দিয়েছে  অপার  সম্ভাবনার  দুয়ার।  বর্তমান সরকার  তথ্য ও যোগাযোগ  প্রযুক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন; যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আশার কথা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মূল  যে হাতিয়ার তা হচ্ছে তথ্য ও  যোগাযোগ  প্রযুক্তি।  আর এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার  করার জন্য দরকার  দক্ষ আইসিটি জ্ঞানসম্পন্ন মানব সম্পদ।
দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্য দরকার ব্যবহারিকসহ  উপযুক্ত কম্পিউটার শিক্ষার। কিন্তু কম্পিউটার শিক্ষায় ব্যবহারিক বাদ দিয়ে আইসিটি এর প্রয়োগ সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করেন।  শুরু থেকে আবশ্যিক হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ব্যবহারিক এবং নম্বর বন্টন বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা না থাকলেও এনসিটিবিতে লেখকদের নিয়ে বৈঠকে এ বিষয়ে অবশ্যই প্রাকটিক্যাল থাকবে এবং এর জন্য নম্বর বরাদ্দ হলো ২৫ যা মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে লেখকরা তাদের বইয়ের পান্ডুলিপি  তৈরি করে এনসিটিবি থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ করেছে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যে ব্যবহারিকসহ নাম্বার বন্টনের বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছে। কিন্তু এনসিসিটিবি থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যাচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো পরিপত্র জারি হয়নি। রাজশাহী ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষা বোর্ডেও এ ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করেনি। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবেসাইটে এ বিষয়ে প্রকাশ হওয়ায় তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা বলে জানা গেছে।
নতুন করে আবশ্যিক হওয়া এ বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন, উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে তাদের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে। যেসব শিক্ষার্থীরা কোনো দিন কম্পিউটার স্পর্শ করেনি তারা এ যন্ত্রটির স্পর্শে আসার আনন্দ উদ্দীপনায় বিভোর।
তবে হঠাৎ করেই শোনা যাচ্ছে এ বিষয়ে ব্যবহারিক থাকবে না। সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ল্যাব নেই, বিদ্যুৎ নেই ইত্যাদি অজুহাতে ব্যবহারিক উঠিয়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। যা একটি আনন্দ আয়োজনের মধ্যে হঠাৎ বিষাদের ছায়া ফেলেছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা হয়ে পড়েছেন উদ্বিগ্ন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মানে কম্পিউটার। আর কম্পিউটার মানে এর অ্যাপ্লিকেশন তথা ব্যবহার। এ বিষয়ে ব্যবহারিক থাকবে না বিষয়টি অনেকে মেনেই নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে ব্যবহারিক থাকার আবশ্যকতা প্রসঙ্গে নিচে কিছু আলোচনা করা হলো।
পূর্বে ২০০ নাম্বারের কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়টিতে ১ম পত্র এবং ২য় পত্র মিলে ব্যবহারিক ছিল ৮০ নাম্বার (যা বর্তমানে সাচিবিক বিদ্যায় রয়েছে)। মূলত প্র্যাকটিক্যালের জন্যই শিক্ষার্থীরা এ বিষয়টি নিতে বেশি আগ্রহী হতো। প্র্যাকটিক্যাল থাকাতে তারা ল্যাব ব্যবহার করে কম্পিউটার অপারেশনের মৌলিক বিষয়গুলো শিখতে পারতো। আর প্র্যাকটিক্যাল এর নাম্বার যেহেতু শিক্ষকদের হাতে থাকে তাই শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখা, শিক্ষকদের কথা শোনা, বেশি বেশি ক্লাশে হাজির হওয়া ইত্যাদি অনেকটা বাধ্য হয়েই করতো। কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল না থাকলে শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই ক্লাশে হাজির হবে না বলে অনেক শিক্ষক  মনে করেন। আর এতে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আইসিটিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির প্রক্রিয়া অনেকটাই ব্যাহত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ বিবিএ অনার্স (হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং), বিএসএস অনার্স (অর্থনীতি), বিএসসি অনার্স (পরিসংখ্যান), সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১০০ নম্বরের কম্পিউটার  অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজী বিষয়টি বাধ্যতামূলক হিসেবে রয়েছে। কিন্তু এতে ব্যবহারিক না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে একেবারেই কম উপস্থিত থাকে যা অনেক সময় শিক্ষকদেরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে।
মাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক না করে কম্পিউটার পরিচিতি বা প্রাথমিক পরিচালনার জ্ঞান ব্যতীত কোন শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সরাসরি ওয়েব পেজ ডিজাইন, এইচটিএমএল বা সি প্রোগ্রামিং বিষয়টি থাকাতে গ্রামগঞ্জের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটুকু পারবে সে বিষয়টি নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন। যে কোন বিষয় চালু হয়ে গেলে প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হলেও পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যেতে দেখা যায়। তাই যেহেতু ধারাবাহিকতা ভেঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে হঠাৎ করে আইসিটি বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাই প্রথমদিকে বোর্ড তাদেরকে নাম্বার দেয়ার ব্যাপারে উদার থাকবে এবং প্রাথমিক পর্যায়ের উক্ত বিষয়গুলো ল্যাবে না করেও অনেকটা চালিয়ে দেয়া যায় বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও পূর্বের ২০০ নাম্বারের কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়ের প্রাকটিক্যালে উক্ত বিষয়গুলো থাকার পরও শহরের ভাল কয়েকটি কলেজ ছাড়া গ্রামেগঞ্জের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ল্যাবে প্র্যাকটিক্যাল করা ছাড়াই (যাদের কথা ভেবে আমরা উদ্বিগ্ন) ভালভাবে পাশ করতে দেখা গেছে। বর্তমানে সরকারি সব কলেজ এবং বেসরকারী প্রায় সব কলেজেই কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর তত্ত্বাবধানে দেশে ১২৮ টি ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে। উন্নত কম্পিউটার, প্রজেক্টর, ইউপিএস এবং এয়ার কন্ডিশনসমৃদ্ধ এসব ল্যাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে ল্যাব সুবিধা নেই সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরকে গ্রুপ গ্রুপ করে উচ্চ মাধ্যমিকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের ব্যবহারিক অংশটি দেখানো যেতে পারে। স্ব-স্ব কলেজের ল্যাবের পাশাপাশি এসব ল্যাবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদেরকে স্বল্প মেয়াদি কম্পিউটার অপারেশন কোর্স করানোর মাধ্যমে আইসিটি বিষয়টি ভালভাবে পড়ানোর উপযুক্ত করে গড়ে তোলা যেতে পারে। আইসিটি বিষয়টি বাধ্যতামূলক  হওয়ায়  এবং  এতে  ব্যবহারিক  থাকায়  যেসব  কলেজে  কমপিউটার  ল্যাব  নেই  সেসব  কলেজের শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়বে। ১৫০-২০০ শিক্ষার্থীর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার জন্য আইপিএসসহ দুই লক্ষ টাকার মধ্যে একটি  কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা যায়।
বর্তমানে অনেক কলেজ হওয়ায় এবং শিক্ষার্থী পাওয়ার ব্যাপারে কলেজগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকায় কলেজ ব্যবস্থাপনা  কমিটি বাধ্য হয়ে দ্রুত কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠিত করবে। কলেজের নিজস্ব ফান্ড না থাকলে স্থানীয় সংসদ সদস্য, শিল্পপতি, এনজিও এবং কম্পিউটার কাউন্সিল এর সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। আর এভাবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইড দূরীকরণের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সুবিধা হবে।
সরকারি কলেজগুলোতে বিশেষ করে মফস্বল এলাকার সরকারি কলেজগুলোতে উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রাইভেট কলেজগুলোর তুলনায় অনেক বেশী। সরকারি কলেজে বিশেষ করে কমার্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকে আগেও কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়টি নিতো। কিন্তু বর্তমানে সবার জন্য আবশ্যিক হওয়াতে শিক্ষার্থী
সংখ্যার তুলনায় ল্যাবে কম্পিউটার সুবিধা পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালের জন্য পূর্বে বরাদ্দকৃত নাম্বারের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনুপাতে এ সংখ্যায় কোন অসুবিধা নেই। বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বোঝা যাবে ধরা যাক বর্তমানে প্র্যাকটিক্যালের জন্য নাম্বার বরাদ্দ হলো ২৫, পূর্বে কম্পিউটার শিক্ষা ১ম এবং ২য় পত্রের জন্য বরাদ্দকৃত নাম্বার ছিল ৮০। অর্থাৎ বর্তমানে বরাদ্দকৃত নাম্বারের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। বর্তমানে যদি পূর্বের কম্পিউটার শিক্ষার শিক্ষার্থীদের সংখ্যা পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশিও হয় তাহলে ল্যাব ব্যবহারে অসুবিধা হবে না।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে ছয়টি অধ্যায় রয়েছে। এ ছয়টি অধ্যায়ের মধ্যে তিনটি অধ্যায়ে ব্যবহারিক রয়েছে। এ তিনটি অধ্যায়ের  মধ্যে আবার তত্ত্বীয় অংশের সাথে তুলনা করলে ল্যাবে করতে হবে এরকম ব্যবহারিক বিষয় হলো এক তৃতীয়াংশ। সে হিসাবে বলা যায় মোট ছয়টি অধ্যায়ের মধ্যে মাত্র একটি অধ্যায় ব্যবহারিক। তাই আরো দেড় বছর পরে ব্যবহারিক শুরু করলেও কোন অসুবিধা হবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানে এখনো পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা নেই তারা উক্ত দেড় বছরের মধ্যে পর্যাপ্ত সুবিধাসম্পন্ন ল্যাব তৈরি করে নিতে পারে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে ব্যবহারিক হিসাবে থাকা সি প্রোগ্রামিং, এইচটিএমএল এবং ডেটাবেজ প্রোগ্রামিং বিষয়গুলো করতে উচ্চ কনফিগারেশনের কম্পিউটারের প্রয়োজন নেই। আট নয় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায় এমনসব কম্পিউটার দিয়ে এ বিষয়গুলোর ব্যবহার দেখানো যায়। তাই কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য ল্যাব তৈরি আগের চেয়ে অনেক সহজ।
তথ্য প্রযুক্তি বিষয়টি আবশ্যিক হওয়াতে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার কোচিং সেন্টারগুলোতে ব্যবহারিক দেখানোর জন্য ব্যক্তি উদ্যাগে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। যদি কোন প্রতিষ্ঠান ল্যাব সুবিধা দিতে না পারে তাহলে শিক্ষার্থীরা স্বল্প টাকায় এ ধরনের কোচিং সেন্টারগুলোর সার্ভিস নিয়ে ব্যবহারিক অংশটি করতে সম্ভব হবে। সারা বাংলাদেশ বিবেচনা করলে দেখা যাবে মাত্র ১-৫% প্রতিষ্ঠান উচ্চ মাধ্যমিকে থাকা ব্যবহারিক করানোর মতো অবকাঠামো নেই। বাকি ৯৫% প্রতিষ্ঠানেই এই সুবিধা রয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তি বিষয়টির ব্যবহারিক অংশটি উৎসাহের সাথে করছে। তাই মাত্র কয়েক পারসেন্ট প্রতিষ্ঠানের কথা বিবেচনা করে বাকি ৯৫% শিক্ষার্থীদেরকে বঞ্চিত করা কি ঠিক হবে? সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ এবং প্রজেক্টর দেয়া হচ্ছে। একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীদেরকে কোন বিষয়ে ভালভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের উপর ভিডিও লার্ণিং সিডি বের হয়েছে। সিসটেক পাবলিকেশন্সের পক্ষ থেকে শিক্ষকদেরকে এসব সিডি ফ্রি বিতরণ করা হচ্ছে। সিডিতে ব্যবহারিক অংশটি হাতে কলমে শিখানো হয়েছে। এর মাধ্যমেও এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ হয়েছে।
যেহেতু উচ্চ মাধ্যমিকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি অর্থাৎ কম্পিউটার বিষয়টি চালু করা হয়েছে তাই কোনভাবেইএর ব্যবহারিক অংশটি বাদ না দেয়ার দাবি বিজ্ঞ মহলের। কম্পিউটার মানেই প্র্যাকটিক্যাল। সারা দেশের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনে প্রথম বছর পরীক্ষা সহজ করা যেতে পারে। যেমন সি এর একটি ছোট প্রোগ্রাম রান করানো, নোটপ্যাড চালু করে এইচটিএমএল এর এক দুইটি ট্যাগের ব্যবহার এবং ডেটাবেজ অংশে একটি টেবিল তৈরি করে তাতে কয়েকটি রেকর্ড সন্নিবেশিত করা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা। ২৫ নাম্বারের মধ্যে এসব ব্যবহারিক কাজের জন্য ১০ নাম্বার বাকি ব্যবহারিক এর সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু তাত্ত্বিক অংশ, মৌখিক এবং প্রজেক্ট লেখা। এভাবে করলে কোন শিক্ষার্থীই খারাপ করবে না। একেবারে রিমুট এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে প্রয়োজনে ঐ ১০ নাম্বার এমনেতেই দিয়ে ব্যবহারিক করার  মতো ল্যাব না থাকার বিষয়টি কভার করা যেতে পারে।
উচ্চ মাধ্যমিকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার বিষয়ে যদি প্র্যাকটিক্যাল না থাকে তাহলে অনেক শিক্ষার্থী হয়তো কম্পিউটার স্পর্শই করতে পারবে না। যদি প্র্যাকটিক্যাল থাকতো তাহলে যেভাবেই হউক একজন শিক্ষার্থী হয়তো কোন না কোন ভাবে একদিনের জন্য হলেও কম্পিউটার ব্যবহার করে দেখার সুযোগ পেতো। যেমন, প্রযুক্তির আলো নামের একটি ভলেনটিয়ার প্রতিষ্ঠান যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাব নেই তাদের শিক্ষার্থীরা যাতে হাতে কলেমে শিখতে পারে সেজন্য উদ্যাগ নিয়েছেন। তাদের মতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি হাতেকলমে শিখতে পারলে ভালোভাবে বিষয়টি বুঝার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ওয়েব ডেভলপমেন্ট এবং প্রোগ্রামিং  এর প্রতি আগ্রহী হতো। প্রযুক্তি ছড়িয়ে যাক সবখানে এ শ্লোগান নিয়ে কার্যক্র শুরু করেছে প্রযুক্তিআলো। বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের তরুণ শিক্ষার্থীরা সমাজের প্রতি দ্বায়বদ্বতা হিসাবে বলেন্টারি মানসিকতা নিয়ে প্রযুক্তি আলোর সদস্য হিসাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদেরকে হাতেকলেমে শিক্ষা দেয়ার উদ্যোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তাদেরকে নিয়ে একটি টীম গঠন করা হয়েছে। এ টীমের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ নিয়ে সরাসরি শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রযুক্তি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিবে। এভাবে সরকারিভাবে উৎসাহিত করলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এগিয়ে আসবে। সরকার যদি সব পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর শিক্ষার্থীদেরকে উৎসাহিত করে তাহলে তাদের নেতৃত্বে স্থানিয় প্রসাশনের সহায়তায় প্রত্যন্ত এলাকায় ক্যাম্প করে শিক্ষার্থীদেরকে  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের ব্যবহারিক অংশটি হাতে কলমে শিখাতে  পারে। এভাবে শিখানোর বিষয়টি যদি অ্যাটাচমেন্টের মতো বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে উভয় শিক্ষার্থীরাই  উপকৃত  হবে। আগামী দিনের তথ্য প্রযুক্তিবিদ যারা হবে তারা নতুন প্রজন্মের মধ্যে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়ার মানবিক সহযোগিতার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
এ বছর যেসব বিষয়ে কখনো প্র্যাকটিক্যাল ছিল না এরকম অনেক বিষয়ে প্র্যাকটিক্যাল যুক্ত করা হয়েছে। কম্পিউটার একটি প্র্যাকটিক্যাল ওরিয়েন্টেড বিষয়। এ বিষয়ে অবশ্যই প্র্যাকটিক্যাল থাকা উচিত। উচ্চ মাধ্যমিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে অর্ন্তভু ক্ত প্র্যাকটিক্যাল না থাকলে এ বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাবে- আগামী দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যে প্রশিক্ষিত ডিজিটাল কর্মী প্রয়োজন তা তৈরি করার জন্য অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবহারিক থাকা প্রয়োজন বলে বিজ্ঞ মহল মনে করেন।
writer- মাহবুবুর রহমান

২১ শতকের চ্যালেঞ্জে মোকাবেলায় ডিজিটাল ক্লাস রুমের প্রয়োগ

Detail

আমরা যারা একুশ শতকের মানুষ, আমরা যে বর্তমানে একটা ডিজিটাল যুগে বাস করছি এটা কি আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পারছি? বিংশ শতকের শিক্ষা আর একুশ শতকের শিক্ষার মধ্যে যে তথ্যগত, প্রযুক্তিগত, শিক্ষন-শিখন পদ্ধতি, কারিকুলামসহ বিদ্যালয় ও শ্রেণীকক্ষের শিক্ষণ পরিবেশের মধ্যে যে পার্থক্য আছে, এটা হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। এ শতক বিদ্যালয়ে আদর্শ শিক্ষন পরিবেশ সৃষ্টি করার কথা বলে, যেখানে বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডারের সাথে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকের মধ্যকার সেতুবন্ধ বা সংযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।
টিকে থাকার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের আয়ত্তে রাখতে হবে একুশ শতকীয় সাক্ষরতা- যার মধ্যে পড়ে মাল্টিকালচারাল, মিডিয়া, তথ্য, মনোজাগতিক, পরিবেশিক, অর্থনৈতিক ও সাইবার-সাক্ষরতা। এ-জাতীয় সাক্ষরতা বাড়াতে হলে দুনিয়ার অন্য দেশের ছাত্রছাত্রীদের সাথে মিথস্ক্রিয়া বাড়ানো দরকার। প্রতিযোগিতা নয়, বরং সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বৈশ্বিক সংস্কৃতিতে মনোনিবেশ করতে হবে তথ্য-হাইওয়ের সাহায্যে। এ শতকের শিক্ষকের দায়িত্বকে সংজ্ঞায়িত করলে আমরা দেখতে পাই, শিক্ষকের কাজ হলো- to learn and help students to turn information into knowledge, and knowledge into wisdom. অর্থাৎ এ শতক কেবল তথ্য দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তারা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র তৈরি করে। একুশ শতকের কারিকুলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে, এটা আন্তঃবৈষয়িক, প্রজেক্টভিত্তিক ও গবেষণা-চালিত। এটি জাতীয় ও বিশ্বপর্যায়ের কমিউনিটির সঙ্গে জড়িত। এ শতকের কারিকুলাম higher order thinking skills, multiple intelligences, technology এবং multimedia এবং একইসাথে multiple literacy-কে অন্তর্ভুক্ত করে। কারিকুলাম textbook-driven বা fragmented নয় বরং এটা হতে হবে বিষয়কেন্দ্রিক, প্রজেক্টনির্ভর এবং সমন্বিত। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রজেক্টভিত্তিক কাজের মাধ্যমে নিজেরাই শিক্ষণ দক্ষতাগুলো অর্জন করবে। এ সকল কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠ্যবই এবং অন্যান্য মাধ্যমগুলোও ব্যবহার করবে। এ শতকের শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের প্রজেক্টভিত্তিক কাজের বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্য মূল্যায়নের ওপরে শিক্ষকদের অবদানকেও ব্যাখ্যা করে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, “Real-world audiences are an important part of the assessment process, as is self-assessment”. অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্ব-মূল্যায়নের একটি গঠনমূলক অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাই একুশ শতকের শিক্ষা বর্তমানে কেবল শ্রেণীকক্ষের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এ শতকের শিক্ষার্থীরা self-directed। তারা স্বাধীনভাবে এবং পারষ্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করে।
পারষ্পরিক মিথষ্ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার অন্যতম মাধ্যম হলো শ্রেণীকক্ষে প্রযুক্তির ব্যবহার। এখন প্রশ্ন হলো, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন কোন প্রযুক্তি আমরা শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করতে পারি? শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার উপযোগী প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যানার, সাইন্স প্রোব, প্লটার, ইলেকট্রনিক হোয়াইটবোর্ড, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে শ্রেণীকক্ষগুলোতে একলাফে এই সকল প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্ভব না হলেও শুরুর দিকে আলোচনা, ছবি প্রদর্শন, পাঠের বিষয়বস্তু সহজভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কার্যকারিতা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সামনে তুলে ধরতে হবে। পরবর্তীতে নানা ডেমো ক্লাস বা ওয়ার্কশপের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা উপস্থাপন করা যেতে পারে। এভাবে ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রযুক্তির প্রয়োগ শ্রেণীকক্ষে বাড়াতে হবে। নিচের চিত্রে একটি ডিজিটাল শ্রেনীকক্ষের ধারণা দেখান হলো।

ডিজিটাল ক্লাসরুম
প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত করবে যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহারই প্রমিত কার্যধারা। শ্রেণীকক্ষে প্রযুক্তির ব্যবহার-
• শিক্ষার্থীদের যে কোনো উন্নয়নের জন্য creative, numerate, literate, well-trained এবং readily re-trainable করবে।
• শিক্ষকদের শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষণ পরিবেশ গঠনের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে।
• বিদ্যালয় পাশ শিক্ষার্থীদের এমন বুনিয়াদি দক্ষতা ও কার্যকারিতা তৈরি করতে সহায়তা করবে যাতে তারা চাকরির বাজারে সফলতার সাথে উৎরে যায়।
কেবল এইগুলোই নয়, প্রযুক্তির ব্যবহার একুশ শতকের শিক্ষার্থীদের শিখন চাহিদা পুরণের সাথে সাথে ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে লড়াই করতে শেখাবে। আমরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে টেকসই উন্নয়নের কথা বলি, সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
একুশ শতকের বিদ্যালয়, শ্রেণীকক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কারিকুলাম ও মূল্যায়নের এ ধারণা আমাদের দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকসহ সকল শিক্ষা ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২০১১ সালে কম্পিউটার বিষয়টির প্রবর্তন একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হলেও কেবল কম্পিউটারকে পাঠ্য হিসেবে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করলেই শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি ব্যবহারে পটু হয়ে উঠবে না। নিঃসন্দেহে এটি একটি দারুণ পদক্ষেপ হলেও তা কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রদানে ব্যর্থ। প্রথমত, কেবল বিষয়ের অন্তর্ভুক্তিকরণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ হবার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে কি? দ্বিতীয়ত, পুঁথিগত বিদ্যাকে তারা ঠিক কতখানি বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত করতে শিখবে? তৃতীয়ত, বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ এবং ভূমিকা সম্পর্কে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সমর্থ হবে কি?
উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদানের জন্য এ মুহূর্তে পর্যাপ্ত সুযোগ বা ব্যবস্থা আমাদের দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়নি। এখনও পর্যন্ত আমরা বুঝি বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাবার প্রাণপণ চেষ্টা করছে, কম্পিউটারকে বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে ব্ল্যাকবোর্ডের পরিবরতে হোয়াইট বোর্ডের সংযোজন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে এখনও পর্যন্ত শিক্ষকদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার শুরু হয়নি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বাইরে বেরিয়ে প্রজেক্টভিত্তিক কাজের সুযোগ-সুবিধা পায় না। স্ব-শিখনকে আমলে এনে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অন্বেষণের ক্ষেত্রে ‘ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী’ হবার সম্ভাবনাকে আমলে এনে শিক্ষার্থীর সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়নি এখনও পর্যন্ত। ৪৫ মিনিটের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত নির্ধারিত ক্লাসের সময়ে বিষয়ভিত্তিক তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিকের হাতেকলমের শিক্ষা ঠিক কতখানি ফলপ্রসূ হবে, এই ব্যপারে খানিকটা সন্দেহ রয়ে যায়।
এখন যেটা কাজের কথা সেটা হল, কী করে নিজেদের আমরা এই শতকের উপযুক্ত করে তুলতে পারি? আমাদের শিক্ষার শুরুটা হল বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে। কাজেই প্রথম যে পদক্ষেপটি নিতে হবে সেটা হলো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষণের জন্য একুশ শতকের উপযোগী ডিজিটাল ক্লাসরুম নিশ্চিতকরণ। ক্যারিবিয় অঞ্চলে এক সময় শ্রেণীকক্ষের চিত্র ছিল একটি টিপিক্যাল ক্লাসরুমের মতো। বসবার জন্য সারিবদ্ধ টেবিল-চেয়ার, ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে চক হাতে বিষয় শিক্ষকের টানা বক্তৃতা দিয়ে যাওয়া, হিপনোটাইজড শিক্ষার্থীদের চোখ চুম্বকের মতো শিক্ষকের প্রতিটি শব্দের ওপরে আটকে যাওয়া, বোর্ডে লিখে যাওয়া পাখির বুলি- এমনটিই ছিল শ্রেণীকক্ষের পরিবেশ। এখন সে পরিবেশ বদলে এখন সেখানে শ্রেণীকক্ষে কম্পিউটার টেকনোলজি প্রতিস্থাপিত হয়েছে। পূর্বে তাদের শ্রেণীকক্ষে টেলিভিশন, রেডিও, ভিসিআর, ওভারহেড প্রজেক্টার টেকনোলজির ব্যবহার ছিল। পরবর্তীতে কম্পিউটার টেকনোলজি ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের আবির্ভাব তাদের শিক্ষন-শিখনের মান উন্নয়ন ঘটিয়েছে। যুক্তরাজ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতি ছয় জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি নয় জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি কম্পিউটার বরাদ্দ করা হয়েছে। সেখানে শতকরা ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। যেখানে শিক্ষকরা আইসিটির ওপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা কিনা ১৯৯৮ থেকে ২০০২ এসে শতকরা ৬৩ ভাগ থেকে ৭৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে। আমরা যদি একই বিচারে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রয়োগ এর কথা চিন্তা করি তাহলে কী দেখতে পাই? নিঃসন্দেহে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এই পিছিয়ে থাকাটা যে ঠিক কতখানি তা আমদের ধারণার বাইরে। আমাদের হাতে হাতে মোবাইল, ঘরে ঘরে টিভি, কম্পিউটারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এ প্রযুক্তিগুলোকে যে কেবল বিনোদনের জন্য নয়, শিক্ষার কাজেও লাগানো সম্ভব এটা আমরা কজনই বা মানি। শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ব্যবহার করে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়া যায়, টেলিভিশনের মাধ্যমে দূর শিক্ষণকে জনপ্রিয় করা সম্ভব, কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যায় না এমন কী আছে? এগুলো সব কাজের কথা, প্রয়োজনের কথা। কিন্তু এ প্রয়োজনটা শিক্ষকদের বোঝানো দরকার আর সেটা করতে হবে হাতেকলমে। শিক্ষার ক্ষেত্রে উদ্যোগটা নিতে হবে নিজেকেই। কারণ আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে সরকারের পক্ষে দেশ চালানোর ঠেলা সামলে এককভাবে শিক্ষার উন্নয়নের কথা চিন্তা করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগকে তাই প্রাধান্য দিতে হবে। চিন্তা চেতনায় স্বকীয়তা তৈরি করতে না পারলে কে কখন শেখাবে আর সাহায্য করবে এ আশাতেই তীর্থের কাকের মতন সময়টা গড়িয়ে যাবে বিনা উন্নয়নে। মোদ্দা কথা হল, উন্নয়ন চাই এবং সেটা টেকসই হতে হবে। এই উন্নয়নকে তরান্বিত করতে সাহায্য করবে শ্রেণীকক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার। প্রকৃতপক্ষে এই ব্যবহার বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ থেকে শুরু না করলে দেশের উন্নয়নকে সামনের দিকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়; কারণ একটা জাতি তখনই উন্নতির দিকে এগিয়ে যায় যখন সে জাতি তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থার ভিতকে মজবুত করে।
Let us think of education as the means of developing our greatest abilities, because in each of us there is a private hope and dream which, fulfilled, can be translated into benefit for everyone and greater strength for our nation. -John F. Kennedy (1917-1963) Thirty-fifth President of the USA
  ফারহানা মান্নান: লেখক, শিল্পী, শিক্ষা-গবেষক। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগবেষণায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত

ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার শুভ উদ্ভোধন করলেন জনাব কবির বিন আনোয়ার

Detail
পি,টি,আই মাঠে নওগাঁ জেলার তিন দিনব্যাপী (১৩-১৫, ফ্রেরুয়ারী ২০১৮) নেটিজেন আইটি লি: Edoman SMS এর মাধ্যমে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার শুভ উদ্ভোধন করলেন জনাব কবির বিন আনোয়ার, মহাপরিচালক (প্রশাসন), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও প্রকল্প পরিচালক, এটুআই প্রোগ্রাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক 
 মো: মাহাবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসেন সহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাগন। এবং প্রথান অতিথি বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

ক্রীড়া সামগ্রী বিতরন

Detail

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরন করছেন সুযোগ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মাসুম আলী বেগ স্যার

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক

Detail

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) (অতিরিক্ত সচিব) ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব কবির বিন আনোয়ার স্যারের মত বিনিময় সভায় I
স্থান : উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, বদলগাছী, নওগাঁ।

February 2018

 
Support : | RSTSBD | RSTSBD
Copyright © 2017. রূপকল্প ২০৪১ - All Rights Reserved
This Blog Published by RSTSBD
Created by Uno Badalgachi