বাংলাদেশের
মাদারীপুর জেলার শিবচর ‘করোনা
প্রতিরোধের মডেল' বলে স্থানীয়
প্রশাসন প্রচার চালাচ্ছে৷ তাদের
উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও
প্রতিবেদন প্রকাশ করছে৷ কিন্তু
বাস্তব অবস্থা কি আসলেই
সেরকম?
কর্তৃপক্ষ
এবং মিডিয়ার একাংশ শিবচরকে যখন
‘মডেল’ দাবি করছে তখনই
সেখানে আরেকজন করোনায় মারা গেছেন৷
আর নতুন করে আক্রান্ত
হয়েছেন একজন৷ উপজেলা স্বাস্থ্য
কর্মকর্তা শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ
বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘‘একজন
নারী চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়ে
মারা গেছেন ২২ এপ্রিল৷
মৃত্যুর পর তার করোনা
পজিটিভ এসেছে৷ তার বাড়ি
শিবচরের কাঁঠালবাড়ি এলাকায়৷ আর নতুন করে
যে নারী আক্রান্ত হয়েছেন,
তিনি থাকতেন মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে৷
তার গ্রামের বাড়ি শিবচরের কুতুবপুরে৷
বাড়ি এলে তার করোনা
পজিটিভ হয়৷’’
নতুন একজন নিয়ে করোনায়
এ পর্যন্ত শিবচরে দুই জন
মারা গেছেন৷ মোট ১৯
জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন৷
তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, ছয়জন
সুস্থ হওয়ার পর আবার
করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাহলে এই উপজেলাটি
করোনা প্রতিরোধে মডেল হয় কিভাবে-
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য
কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এমপি সাহেবের নির্দেশনায় আমরা চেষ্টা করছি৷
তিনি অনেক পরিশ্রম করছেন৷’’ তবে তিনি স্বীকার
করেন, ‘‘শিবচরসহ পুরো জেলা লকডাউন
হলেও এখানে বাইরে থেকে
লোকজন আসা-যাওয়া করছে,
ঠোকানো যাচ্ছে না৷’’
ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয় গত ১৩ মার্চ এক ইটালিফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে৷ ২৫ মার্চ প্রথম একজন মারা যান৷ তিনি ওই ইটালিফেরত প্রবাসীর বাবা৷ ইটালিফেরত ওই প্রবাসীর মাধ্যমে তার ঘনিষ্ঠ আরো সাতজন সংক্রমিত হন৷ বাংলাদেশে প্রথম শিবচর ১৯ মার্চ লকডাউন করা হয়৷ ইটালিসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী ৬৮৪ জন তখন শিবচরে ফিরে আসায় উপজেলাটি লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন৷
প্রশ্ন
উঠেছে সামাজিক দূরত্ব নিয়ে৷ ছয়জন
পুনরায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার
বিষয়টি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷
স্থানীয়দের কেউ কেউ দাবি
করেন, পৌর এলাকায় ইটালিফেরতদের
আত্মীয়-স্বজন ঘোরাফেরা করেছেন৷
মসজিদে গিয়ে তখন নামাজও
পড়েছেন৷ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
জানান, ‘‘তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমেই ফের আক্রান্ত হয়েছেন৷’’ তাহলে এটা নিশ্চিত
যে আক্রান্তদের অনেককে চিহ্নিত করা
যায়নি৷ একই সঙ্গে তাদের
স্বজনরা সামাজিক দূরত্ব মানেননি৷ এর
জবাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
বলেন, ‘‘সবাইকে তো আর
চিহ্নিত করা সম্ভব না৷
আর সামাজিক দূরত্ব না মানলে
আমরা কী করতে পারি?’’
মুন্সিগঞ্জ
থেকে একজন এসে করোনা
পজিটিভ হলেন কিভাবে? উপজেলা
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘‘লোকজন তো বাইরে
থেকে আসছে৷ সেটা দেখার
দায়িত্ব আমাদের নয়৷’’
তাহলে শিবচর করোনা প্রতিরোধের
মডেল হয় কিভাবে? উপজেলা
স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জবাব, ‘‘ ১১ এপ্রিলের পর
নতুন কেউ আক্রান্ত না
হওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা এ কথা
বলেছিলাম৷’’
শিবচর
থানার ওসি আবুল কালাম
আজাদ বলেন, ‘‘লোকজন এখনো বাইরে
থেকে আসছেন৷ কাঁঠালবাড়ি ফেরি
চালু আছে জরুরি পণ্য
পরিবহণের জন্য৷ কেউ নদী পার
হয়ে আমাদের উপজেলায় এলে
তাকে তো আর ফেরত
পাঠাতে পারি না৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘শিবচর করোনা প্রতিরোধে মডেল হয়েছে- এটা যারা বলে তাদের ব্যাপার৷ আমি বলি না৷ তবে আমরা চেষ্টা করি যে খারাপ পরিস্থিতি হতে পারতো তা হয়তো থামাতে পেরেছি৷ এখানে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে ঠিকমতো৷ আমরাও চেষ্টা করছি লোকজনকে ঘরে রাখতে৷ এখন শুধু শিবচর নয়, পুরো মাদারীপুর জেলাই লকডাউন৷ আমাদের এমপি নুরে আলম চৌধুরী লিটন সাহেব সবাইকে সমন্বিত করে কাজ করছেন৷’’
শিবচরকে
করোনা প্রতিরোধে মডেল দাবিকারীদের আরেকজন
হলেন মাদারীপুর জোন সুজন-এর
সভাপতি রাজন মাহমুদ৷ তিনি
বলেন, ‘‘১১ এপ্রিলের পর
শিবচরে কেউ আক্রান্ত হয়নি৷
তাই ভেবেছিলাম শিবচর করোনা প্রতিরোধে
সফল হয়েছে৷ কিন্তু এখন
দেখছিতো আবার আক্রান্ত হচ্ছে৷’’
প্রিভেন্টিভ
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী
মনে করেন প্রশাসন বা
কোনো রাজনৈতিক মহল মহামারির সময়
কোনো এলাকাকে ‘প্রতিরোধের মডেল’ ঘোষণা করতে পারে
না৷ তার মতে, ‘‘এটা
করতে পারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷
এর বাইরে করোনা নিয়ে যে
শিবচরকে মডেল বলছে স্থানীয়
প্রশাসন, তাতে ক্ষতি হচ্ছে৷’’ এর মধ্যে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো
উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও
তিনি মনে করেন৷
বিষয়টি
নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কোনো
দায়িত্বশীল ব্যক্তি কথা বলতে রাজি
হননি৷ তবে খোঁজ নিয়ে
জানা গেছে, তারা বাংলাদেশের
কোনো এলাকাকে ‘করোনা প্রতিরোধে মডেল’ বলে এখনো কোনো
ঘোষণা দেয়নি৷
সূত্র: .dw.com